পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হওয়া ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। অনলাইনে সহজে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান ও গ্রহণে এ নির্দেশনা ভূমি মালিক ও কর্মকর্তাদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই নগদ টাকায় কোনো ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করা যাবে না।
পহেলা বৈশাখ থেকে পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ভূমি অফিসে সংরক্ষিত অব্যবহৃত ও আংশিক ব্যবহৃত সব খাজনা আদায়ের রশিদ বই (দাখিলা বহি) প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসক তা জেলা ট্রেজারিতে সংরক্ষণ করবেন এবং এর বিবরণী ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।
পহেলা বৈশাখ থেকে শতভাগ ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে আদায়ের সুবিধার্থে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিবরণ অনলাইনে এন্ট্রি করবেন। ভূমির শ্রেণি তথা কৃষি, অকৃষি, আবাসিক, বাণিজ্যিক কিংবা শিল্প যা আছে তাই অনলাইনে এন্ট্রি দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভূমি মালিকরাও অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ ও আদায়ে সরাসরি অংশীজন। সুতরাং নির্দেশনা অনুসরণ করলে তারাও কর প্রদানের সময় তাদের নাগরিক অধিকারের বিষয়ে সচেতন থাকতে পারবেন। ভূমি কর্মকর্তারা ভূমি মালিকদের কী সেবা দিচ্ছেন সে বিষয়ে আগে থেকে ধারণা থাকবে। ফলে ভূমি কর্মকর্তা ও ভূমি মালিক উভয়ে নিজ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থেকে দায়িত্বপালন সহজ হবে। একজন ভূমি মালিক নাগরিক নিবন্ধন করে খতিয়ান যুক্ত হওয়ার সর্বোচ্চ সাত কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন তহশিলদার নিজ দাপ্তরিক আইডি থেকে ওই হোল্ডিং যাচাই ও সমন্বয় করে অনুমোদন করবেন। এর ব্যত্যয় হলে তা একজন কর্মচারীর অদক্ষতা হিসেবে গণ্য করা হবে।
নাবালক বা প্রবাসী ভূমি মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে তাদের নাগরিক নিবন্ধনে নাবালক বা প্রবাসীর জন্মনিবন্ধন বা পাসপোর্ট দিয়ে নাগরিক নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে। নাবালক বা প্রবাসীর আইনানুগ অভিভাবক বা প্রতিনিধির মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ইউনিয়ন তহশিলদার অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ব্যবস্থা করবেন। খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিকের নাম জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল না থাকলে এবং নারীদের ক্ষেত্রে রেকর্ডে স্বামীর নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম থাকার কারণ দেখিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের আবেদন বাতিল করা যাবে না।
মালিকের নামে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ক্ষেত্রে শুধু হোল্ডিংধারী ভূমি মালিকের নামে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধকারী বা ভাড়াটিয়ার নাম দাখিলায় যুক্ত করা যাবে না। ব্যক্তির ক্ষেত্রে আংশিক ভূমি উন্নয়ন কর আদায় যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে কোনো একজন মালিক নিজ অংশের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে চাইলে নামজারির (মিউটেশন) মাধ্যমে আলাদা হোল্ডিং তৈরি করতে হবে। ভূমির ব্যবহারভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ক্ষেত্রে গ্রামের বাড়িগুলো পাকা ভিটির না হলে কৃষিজমি হিসেবে গণ্য করে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে হবে। কিন্তু যদি রেকর্ডে বাড়ি উল্লেখ থাকে কিংবা বাস্তবে বাড়িটি পাকা ভিটির হয়, তাহলে আবাসিক হারে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারিত করতে হবে। একই দাগের জমি আংশিক কৃষি ও আংশিক অকৃষি (শিল্প, বাণিজ্য ইত্যাদি) কাজে ব্যবহৃত হলে ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী হারাহারিভাবে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ করে আদায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অগ্রিম ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো ভূমি মালিক ইচ্ছা করলে বকেয়া ও হাল সনের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার পর পরবর্তী তিন বছরের ভূমি উন্নয়ন কর অগ্রিম পরিশোধ করতে পারবেন। পরিশোধিত অগ্রিমের মেয়াদের মধ্যে ভূমি ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন বা সরকারি নির্দেশনার কারণে ভূমি উন্নয়ন করের দাবি বেড়ে গেলে বর্ধিত হারে ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া হিসেবে আদায়যোগ্য হবে। একই হোল্ডিং-এ হালসন (বর্তমান) পর্যন্ত বা একাধিক বছরের অগ্রিম ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধিত থাকা অবস্থায় আংশিক হস্তান্তর বা উত্তরাধিকারসূত্রে নামজারি (মিউটেশন) হলে নতুন হোল্ডিংধারী হোল্ডিং গ্রহণের তারিখ থেকে নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করবেন।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আংশিক ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের সময় ভূমি উন্নয়ন কর বছরভিত্তিক আংশিক আদায় করা যাবে। আংশিক আদায়ের পর বকেয়া থাকলে ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেমে বকেয়া দাবি প্রদর্শিত হয়েছে কিনা- তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর কোনোক্রমেই মাসভিত্তিক আদায় করা যাবে না। ১৯৭২ সাল থেকে ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির খাজনা মওকুফ রয়েছে। তবে ওই জমির হোল্ডিং প্রতি ১০ টাকার মওকুফ দাখিলা প্রতি বছরের জন্য একবার আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে হোল্ডিং-এ একাধিক অংশীদার থাকলে প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে ১০ টাকার মওকুফ দাখিলা সংগ্রহ করতে পারবেন। কৃষিজমির অবিভক্ত খতিয়ান বা হোল্ডিং ২৫ বিঘার ঊর্ধ্বে হওয়া সত্ত্বেও অংশীদারদের প্রত্যেকের অংশ আলাদা করে বিবেচনা করা যাবে না। কোনো অংশীদার নিজের অংশ আলাদা করতে চাইলে স্বীয় নামে হোল্ডিং খুলে মওকুফ দাখিলা সংগ্রহ করবেন।
নিষ্কর ও ইকোনোমিক জোনের ভূমি উন্নয়ন কর বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো যাচাইয়ের মাধ্যমে নিষ্কর এলাকা নির্ধারণ করবেন। নিষ্কর হোল্ডিং-এর ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১০ টাকা দিয়ে মওকুফ দাখিলা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনলাইন দাখিলায় অনুমোদিত মওকুফ লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে land.gov.bd নিবন্ধন করে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে অনলাইনেই দাখিলা সংগ্রহ করা যাচ্ছে। ১৬১২২ নম্বরে কল করে (বিদেশ থেকে +৮৮০ ৯৬১২৩ ১৬১২২) অথবা সরাসরি www.facebook.com/land.gov.bd ফেসবুক পেজে মেসেজ পাঠিয়ে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর বিষয়ে কোনো কিছু জানার থাকলে প্রশ্ন করে বিস্তারিত জানা যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।