ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে আইটি সেক্টর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

যে হারে মানুষ বাড়ছে সে হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশে বর্তমানে ৪.৩১ শতাংশ মানুষ বেকার সংখ্যার হিসেবে প্রায় ৩০ লাখ। এবং এই বেকারদের অধিকাংশের রয়েছে উচ্চতর ডিগ্রি। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ লাখ। শিক্ষিত বেকারত্বের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের দেশের অবস্থান ওপরের দিকে। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমান বেকারদের সংখ্যার সঙ্গে প্রতি বছর সরকারি বেসরকারি প্রায় ১০০ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরো প্রায় ২ লাখ স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে শ্রমবাজারে হাজির হচ্ছে এবং তারা প্রত্যকেই একটি মানসম্মত কর্মসংস্থান প্রত্যাশা করে। কিন্তু এত ছোটো একটি দেশে এই বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা কি আদৌ সম্ভব! পূর্বের ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ শিক্ষিত বেকারের সঙ্গে যখন আরো ২ লাখ যোগ হয় তখন সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মোটে ২ থেকে আড়াই লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। ইকোনমিস্টের মতে, স্নাতক শেষ করে দেশের ৪৭ শতাংশ ছাত্র একটি দীর্ঘ সময় বেকার থাকে, এই সময়ে তাদের অনেকেই কর্মহীন থাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। নতুন শিল্পকারখানা করতে চাই প্রচুর বিনিয়োগ ও ভূমি। দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে শিল্পে বিনিয়োগ সম্ভব হলেও শিল্পকারখানা তৈরিতে যে প্রয়োজনীয় ভূমি দরকার সেটি কৃষিপ্রধান একটি দেশে সম্ভব নয়। শিল্পের জন্য আবাদি জমি নষ্ট হলে আবার ১৬ কোটি মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। কাজেই এক সমস্যা সমাধানে আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি কাজের কথা হতে পারে না। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, বেকারত্বের এই বেড়াজালে আটকে থাকলেও চলবে না, এ ক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান। যেমন সিঙ্গাপুর একটি ছোটো দেশ হয়েও ভার্চুয়ালি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে তাদের দেশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। এই কাজের জন্য প্রয়োজন তরুণ শক্তি ও তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশের বড়ো শক্তি কর্মক্ষম তরুণ, মোট জনগণের প্রায় ৬৪ শতাংশ কর্মক্ষম। এই বিপুলসংখ্যক তরুণ শক্তিকে অনলাইন বা ফ্রিল্যান্সিং জগতে নিয়ে আসতে পারলে কর্মসংস্থানের ওপর চাপ কমবে। সদ্য গ্র্যাজুয়েট যারা কর্মের সন্ধানে আছে ছোটোখাটো ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে হয়ে উঠবে স্বাবলম্বী। অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির চাকায় নতুন গতির ছোঁয়া লাগবে। বিশ্ব শ্রমবাজার এখন তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক হয়ে উঠছে, সফটওয়্যার তৈরি ও রপ্তানি করে অনেক দেশ তাদের কর্মসংস্থান সমস্যা দূর করে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে এই শিল্পটি এখনো অতটা ভালোভাবে তৈরি হয়নি। অথচ কম্পিউটার বা সফটওয়্যার রপ্তানিতে যে তরুণ শক্তি প্রয়োজন তা আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণ রয়েছে। দেশে গড়ে উঠছে ২৮টি হাইটেক পার্ক, যা কয়েক লাখ তরুণের কর্মের ব্যবস্থা করবে, শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যত্ পৃথিবী যে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি বিশ্ব হচ্ছে বাংলাদেশও সে দিকেই আগাবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি ও সেবা খাতে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে এবং বার্ষিক আয় ১০০ কোটি ডলারের বেশি। সারা বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির যে চাহিদা সেই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের বেকার সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান করা যাবে এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার। আইটি সেক্টরে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বাড়লে মোবাইল ল্যাপটপ ইত্যাদি দেশেই তৈরি সম্ভব এবং বিশ্ববাজারে এর একটি বড়ো মার্কেট রয়েছে। প্রযুক্তি আমদানিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, দেশের তরুণ শক্তি কাজে লাগাতে পারলে আমদানি কমার পাশাপাশি রপ্তানি ও বেকার সমস্যার একটি সমাধান হবে। পোশাকশিল্পের পর তথ্যপ্রযুক্তি ও আইটি সেক্টর হয়ে উঠতে পারে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড়ো সেক্টর। সর্বোপরি ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা দূর করতে আইটি সেক্টর হবে একটি স্থায়ী সমাধান।

মাহমুদুর রহমান মানিক : শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053040981292725