ক্লাসরুমের অভাবে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি |

লক্ষ্মীপুরে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল দশা। অনেক বিদ্যালয়ে ক্লাসরুমের অভাবে পাঠদান হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে, কোথাও কোথাও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। নেই শিখন-শেখানের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ। এতে করে জেলায় প্রতিবছর ৫ শতাংশ শিশু শিক্ষার্থী প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছে। এছাড়াও নানা সমস্যায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এ জেলায়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর নতুন তালিকা তৈরিসহ সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ চলছে।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদরের চর রমনী মোহন ইউনিয়নে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয় পশ্চিম চর রমনী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেটি ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে চার কক্ষ বিশিষ্ট ও ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে দুই কক্ষের পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ওই বিদ্যালয়ে বাড়তি শিক্ষার্থীদের চাপে ২০০৪-০৫ খ্রিষ্টাব্দে দুই কক্ষের আরও একটি ভবন নির্মাণ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টিকে ৫ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী ও ১১ জন শিক্ষক রয়েছে।

এদিকে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে এসে আগের দুটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত করে শ্রেণি কার্যক্রমসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় শিক্ষা অফিস। এতে করে ৮টির মধ্যে ৬টি কক্ষই বন্ধ হয়ে যায়। অপর দুটি কক্ষের একটিতে শিক্ষকদের অফিস আর অন্যটি শ্রেণি কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এখন।

ফলে একটি মাত্র শ্রেণি কক্ষে কোনোভাবেই পাঠদান চালাতে পারছেন না শিক্ষকরা। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচেই পাঠদানে অংশ নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কখনও রোদে জ্বলে আবার কখনও বৃষ্টিতে ভিজে পড়ালেখা করতে হয় বলে জানান তারা। এছাড়াও বিদ্যালয় আঙ্গিনায় অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর টয়লেটের দুর্গন্ধেও ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। গত বৃহস্পতিবার ক্লাস পরীক্ষায় নাকে হাত দিয়ে লিখতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়ের বাইরে মাঠে প্রচণ্ড রোদে জ্বলে ক্লাস করতে দেখা গেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

শুধু এ বিদ্যালয়ই নয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, লক্ষ্মীপুর জেলায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ৭৫টি। নতুন তালিকায় সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ। তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।   

এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠিয়ে শঙ্কিত থাকেন অভিভাবকরা। অনেক শিশু আসতেও চায় না বিদ্যালয়ে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠও, খেলাধুলার সামগ্রীও নেই সব বিদ্যালয়ে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৩৩ শতক ভূমি থাকার কথা থাকলেও বেশীরভাগ বিদ্যালয়ের জমি ভূমি-দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা যায়।

এসব নানাবিদ কারণে অনেক শিশু শিক্ষার্থী প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছেন। বছরে এমন শিশুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৫ পার্সেন্টে। তবে এ ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা দায়ী করছেন দারিদ্র্যতা ও নদী ভাঙনকে।

অন্যদিকে, সরবকারি এসব স্থাপনা নির্মাণে যথাযথ তদারকি থাকে না বলে মনে করছেন সচেতন মহল। নিম্মমানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে ১০-১৫ বছরের মধ্যেই ওই ভবনগুলো হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে সরকারকে সঠিক তত্ত্বাবধায়নের দাবি জানান তারা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা - dainik shiksha জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি - dainik shiksha মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার - dainik shiksha ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010163068771362