ক্লাস শুরু হয়নি গুচ্ছের ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ভোগান্তি লাঘবের গুচ্ছে যেন ভোগান্তির শেষ নেই। নতুন বছর শুরু হলেও এখনো ক্লাসরুমে বসতে পারেনি গুচ্ছভুক্ত ২২ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ২১ হাজার শিক্ষার্থী। শুধু ক্লাস শুরুই নয়, এখানো ভর্তি প্রক্রিয়াই শেষ করতে পারেনি গুচ্ছের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই। অথচ গুচ্ছবর্হিভূত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিভাগে প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে গেছে। ক্লাস কবে শুরু হবে- এ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও একই প্রশ্ন। জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে অতীতে ক্লাস শুরু হলেও এ বছর ক্লাসের বিষয়ে কিছুই জানেন না গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ারম্যান ও ডিনরা। তারা বলছেন, গুচ্ছের কেন্দ্রীয় কমিটি সব জানে। তবে সপ্তম মেরিট লিস্ট দিয়েও আসন পূরণ না হওয়ায় ক্লাস শুরু কবে থেকে, তার যথাযথ উত্তর নেই খোদ গুচ্ছ ভর্তির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছেও। আয়োজক কমিটি বলছে, মেরিট লিস্ট প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরে মাইগ্রেশনে সুযোগ পেয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। এরপর ভর্তি হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন খালি হয়ে যায়। এভাবে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করতে বিলম্ব দেখা যায়। তাই ৬টি মেরিট লিস্ট প্রকাশের পর দ্রুত ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে সপ্তম মেরিট লিস্ট থেকে মাইগ্রেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন দাবি করে হাইকোর্টে রিট করে শিক্ষার্থীরা।

 

শিক্ষার্থীদের দাবি, আগের মেরিট লিস্টের শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশনের সুযোগ পেলে, তারা কেন পাবেন না। শিক্ষার্থীরা বলেন, গুচ্ছ কমিটি পরীক্ষা শেষ করে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিল। ভর্তি প্রক্রিয়ার কার্যক্রম দেরিতে শুরু করে এর মাশুল শিক্ষার্থীরা পাবে কেন। এরপর ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ‘মাইগ্রেশন বন্ধ রাখা’ কেন অবৈধ নয় রুল জারিসহ গুচ্ছের এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আদেশ দেন। এরপর গুচ্ছ কমিটি আবারো মাইগ্রেশন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে দীর্ঘ সময় জটে থাকায় আরো পিছিয়ে পড়ে গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রম।

এভাবে ভর্তি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় ক্লাস শুরুর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে প্রাথমিক ভর্তি হওয়া সানজিদা আফ্রিন দিপা বলেন, আমি অনেক আগেই ভর্তি হয়েছি। ভেবেছিলাম জানুয়ারির প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস রুমে বসব। কিন্তু এখানো ক্লাস শুরু হয়নি। কবে শুরু হবে তারও কোনো নোটিস নেই। অথচ আমার বন্ধুরা ঢাবিতে ভর্তি হয়ে প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করে ফেলেছে। আয়েশা সাদিয়া নামে আরেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ২০২৩ সাল হয়ে গেল, এখনো চূড়ান্ত ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে পারলাম না। মাঝে দুই বছর ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলে গেল।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান আসমা বিনতে ইকবাল বলেন, জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ক্লাস শুরু হয়। এবছর এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। কবে শুরু হবে, চূড়ান্ত ভর্তি কবে এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই। নতুন শিক্ষার্থীদের আগমনের জন্য আমরা মুখিয়ে আছি।

এদিকে এ ভর্তি প্রক্রিয়ার চলমান সংকট দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, গুচ্ছ ভর্তিতে অনাকাক্সিক্ষত সংকট তৈরি হয়েছে। ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে এই সংকটের কার্যকর সমাধান বের করতে হবে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি ভালো আয়োজন যেন প্রশ্নের মুখে না পড়ে সেদিকে উপাচার্যদের সচেষ্ট থাকার পরামর্শ দেন ইউজিসির এ সদস্য।

সরাসরি নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুচ্ছভুক্ত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বলেন, শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টে রিট করার কারণে ক্লাস

শুরু হওয়া নিয়ে এক ধরনের জটিলতা শুরু হয়। আমরা কাটিয়ে উঠেছি। ৯০ শতাংশ আসনে ভর্তি হয়ে গেলে ক্লাস শুরু করা যাবে। কয়েকদিনের ভেতর আমরা ক্লাস শুরু করতে পাবর। তবে গুচ্ছ ভর্তির আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, দ্রুত ক্লাস শুরুর জন্য আমরা মাইগ্রেশন বন্ধ করেছিলাম। হাইকোর্টের নির্দেশে আবার চালু করেছি। তবে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে ক্লাশ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053050518035889