এইচএসসি পরীক্ষাখাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন বেড়েছে ৬৫ শতাংশ, চাপে বোর্ড

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এক বছরে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অসন্তুষ্ট হয়ে শুধুমাত্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই ৩১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছে। তাদের আবেদনের মোট বিষয়ের সংখ্যাই এক লাখ পাঁচ হাজারের মতো। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর খাতা পুনর্মূল্যায়নে রীতিমতো চাপের মুখে রয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডর কর্মকর্তারা। গত কিছুদিন ধরে শিক্ষা বোর্ডে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা খাতা পুনর্মূল্যায়নের কাজ চলছে। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে আরও জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন।   

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। এ পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে মোট দুই লাখ ৭৬ হাজার ৯৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে দুই লাখ ৪৩ হাজার ২২১ জন উর্ত্তীণ হয়েছে।

কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে অসন্তোষ্ট হয়ে খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য ৩১ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থী ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেছে। এসব শিক্ষার্থী মোট এক লাখ চার হাজার ৬৬৫টি ‘স্ক্রিপ্ট’ বা বিষয়ের খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছে বলে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এই পরীক্ষায় ২০ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছিল। তারা প্রায় ৫০ হাজার ‘স্ক্রিপ্ট’ বা বিষয়ের খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছিল। এ হিসেবে এক বছরে এইচএসসিতে খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। ওই বছর ঢাকা বোর্ড থেকে দুই লাখ ৯৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

এবার বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার বলেন, ‘এটি রুটিন ওর্য়াক। তবে এবার আবেদন একটু বেশি পরলেও কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমরা অভিজ্ঞ পরীক্ষকদের নিয়ে এসে বোর্ডেই খাতা রিস্ক্রুটিনির (পুনর্মূল্যায়ন) কাজ করছি।’

১০ মার্চ রিস্ক্রুটিনির ফল প্রকাশ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণত কোন উত্তরপত্রের নম্বর গণনার বাদ পড়েছে কি-না, কোন উত্তরপত্র বা খাতা আনমার্কড (নম্বরবিহীন) রয়েছে কি-না, অন্য ভুল হয়েছে কি-না তা দেখা হয়। তবে কোন পরীক্ষক যদি কোন একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য সাত বা আট নম্বর দিয়ে থাকেন সেটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।’

অধ্যাপক আবুল বাশার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘মনে করেন পরীক্ষক একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য ৯ নম্বর দিয়েছেন; সেটি ভুলবশত ৩ নম্বর হিসেবে গণনা করা হলো;...এ ধরণের ভুল সংশোধন করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনভাবে যাতে পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনায় রাখা হয়।’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১০-১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পাবলিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে। এর আগে ন্যূনতম তিনমাসে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হতো।

প্রতিবার নিয়মিত হারে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়। এ কারণে খাতা মূল্যায়নের জন্য শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত পরীক্ষকদের (বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক) ওপরও চাপ পড়ে।

আবার সাধারণ বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের খাতা মূল্যায়নের জন্য ‘অভিজ্ঞ’ শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে। এ সমস্যা নিরসনের জন্য একজন পরীক্ষককে পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’টি খাতাও দেয়া হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে একজন পরীক্ষককে ‘আটশ’ থেকে এক হাজার’ খাতাটি দেয়া হয় বলেও জানা গেছে।

অন্য বিষয়ের খাতা মূল্যায়নে পরীক্ষক স্বল্পতা না থাকায় জনপ্রতি দুই থেকে তিনশ’টি খাতা দেয়া হয়। তবে খাতার সংখ্যা যাই হোক না কেন তা মূল্যায়নের জন্য সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হয় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরীক্ষক জানিয়েছেন। আর খাতা প্রতি ৩৫ টাকা করে শিক্ষকদের সম্মানী দেয়া হয় শিক্ষা বোর্ড থেকে।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, ‘দুটি কারণে খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন একটু বেশি হয়। প্রথমত, এক সময় ম্যানুয়ালি আবেদন করতে হতো, বেশ কয়েক বছর ধরে এটি উন্মুক্ত ও ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। এ কারণে এখন ঘরে বসে অনলাইনেই আবেদন করা যাচ্ছে।’

‘দ্বিতীয়ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের স্বল্পতার’ কারণে ‘রিস্ক্রুটি’র আবেদন বেশি হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে পেশাদারিত্বের মানসিকতার খুব একটা উন্নতি ঘটছে না। খাতা মূল্যায়নে অনেকেই উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা দেখায়। এ কারণেও মূল্যায়নে ভুল-ত্রুটি থেকে যায়। এ সমস্যা নিরসনে পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়া যায়।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা হুঁশিয়ারি - dainik shiksha জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা হুঁশিয়ারি রাজনীতি করি না, ভবিষ্যতেও করবো না: ঢাবির নতুন ভিসি - dainik shiksha রাজনীতি করি না, ভবিষ্যতেও করবো না: ঢাবির নতুন ভিসি চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন - dainik shiksha চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য - dainik shiksha দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য এনসিটিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি বৈষম্যবিরোধীদের - dainik shiksha এনসিটিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি বৈষম্যবিরোধীদের কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003046989440918