খুকৃবির নিয়োগে অনিয়ম : মানা হয়নি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ, অভিযুক্তরা বহাল

খুলনা প্রতিনিধি |

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ৪২৬ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল অনেক দিন আগেই। বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়। সংবাদে তুলে ধরা হয় ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৪২৬ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, এর জন্য মাত্র তিন বছরে ৪৩টি বিভাগ খোলা, তৎকালীন উপাচার্যের ছেলেমেয়ে, শ্যালক, ভাতিজা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ, ইউজিসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিয়োগ অব্যাহত রাখাসহ নানা অনিয়ম। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩ আগস্ট উপাচার্যের ছেলেমেয়েসহ ৭৩ শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এর পর উপাচার্যের মেয়াদ শেষ করে বিদায় নিয়েছেন ড. শহীদুর। নিয়োগ পেয়েছেন নতুন উপাচার্যও। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রায় ছয় মাস পরও অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিলে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এখনও বহাল তবিয়তেই চাকরি করছেন তারা।

প্রাক্তন উপাচার্য ড. শহীদুর বিদায় নেওয়ার পর গত ১৬ নভেম্বর থেকে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম চৌধুরী। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের এই অধ্যাপক দায়িত্ব নিয়েও কেন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি তার কারণ অজানা।

জানা গেছে, নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনার পর গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসজুড়ে অভিযুক্ত শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি চেয়ারম্যান, সদস্যসহ সংশ্নিষ্ট সবার কাছে গিয়েছেন। মূলত তাদের দৌড়ঝাঁপের কারণেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি। ফলে অভিযুক্ত শিক্ষকরা এখনও নির্বিঘ্নেই চাকরি করছেন। এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন প্রাক্তন উপাচার্যের সবচেয়ে আস্থাভাজন বলে পরিচিত আশিকুল আলম। অথচ ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে আবেদনের নূ্যনতম যোগ্যতাই আশিকুল আলমের ছিল না। সহকারী অধ্যাপক পদও ছিল একটি। নিয়মনীতি না মেনে ওই পদে আশিকুলসহ দু'জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।

ইউজিসির প্রতিবেদনে উঠে আসে, প্রাক্তন উপাচার্যের মেয়ে ইশরাত খান কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক পদে ৩০ জন আবেদনকারীর মধ্যে সর্বনিম্ন সিজিপিএ পেয়েছিলেন। ৩০ আবেদনকারীর মধ্যে সিজিপিএর দিক থেকে ইশরাতের অবস্থান ছিল সবশেষে। তার পরও যোগ্যদের বাদ দিয়ে ইশরাত নিয়োগ পান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনায় নাম থাকা প্রাক্তন উপাচার্যের শ্যালক জসিম উদ্দিন, ভাতিজা মুরাদ বিল্লাহ, শ্যালিকার ছেলে সাইফুল্লাহ হক, ভাতিজা সুলতান মাহমুদ, মিজানুর রহমান, ইমরান হোসেনসহ অন্যরা নিয়মিত অফিস করছেন। তবে ড. শহীদুরের ছেলে শফিকুর রহমান অফিসে অনিয়মিত।

কেন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, তা জানতে গতকাল সোমবার যোগাযোগ করা হয় নতুন উপাচার্য ড. আবুল কাশেম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আগে যা ঘটেছে বা নির্দেশনা এসেছে, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ওই প্রশাসনের ছিল। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর ইউজিসি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। আগের কোনো বিষয় নিয়ে আমার কিছু বলার বা পদক্ষেপ নেওয়ার নেই। তার পরও দুদক কিছু কাগজ চেয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন তদন্তের দায়িত্ব দুদকের।'

এদিকে খুকৃবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গত তিন বছরের নিয়োগ-সংক্রান্ত অধিকাংশ নথি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছে খুকৃবি কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, গণমাধ্যমে সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে গত নভেম্বর মাসে দুদকের সভায় নেয়া হয় খুকৃবির নিয়োগে অনিয়ম অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত। গত ৭ ডিসেম্বর অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক এরশাদ মিয়াকে। তিনি গত ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি পাঠান। এতে ৪২৬ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি, প্রার্থীদের আবেদন, লিখিত পরীক্ষার খাতা, প্রাপ্ত নম্বর, নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ, মৌখিক পরীক্ষায় নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের প্রত্যেকের পৃথক নম্বরশিট, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অকৃতকার্য প্রার্থীদের নামের তালিকা, অযোগ্যতার ব্যাখ্যা এবং নিয়োগ-সংক্রান্ত অভিযোগের কোনো তদন্ত হয়ে থাকলে তার প্রতিবেদনের সত্যায়িত ছায়ালিপি ১০ জানুয়ারির মাধ্যমে জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

কিন্তু এত নথি অল্পদিনের মধ্যে দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয় সময় বৃদ্ধির। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বর্ধিত করেন। যার ভিত্তিতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার নথিগুলো অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এ বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া বলেন, নথির আংশিক বুঝে পেয়েছি। এগুলো এখন পরীক্ষা করে দেখা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052218437194824