আজ ১৭ মার্চ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন।বাঙালির জন্য এক অবিস্মরণীয় দিন।বাঙালির জীবনে এক মহাআনন্দের দিন আজ।বঙ্গবন্ধু এমন এক নেতা..যিনি বাঙালিকে দিয়েছেন একটি পতাকা, একটি মানচিত্র,একটি সংগীত,একটি ভূ-খন্ড..যার নাম বাংলাদেশ। বাঙালির হৃদয়ে তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠসন্তান।সরকার জাতির পিতার জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করেছে।বেসরকারি পর্যায়েও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।মহান এই নেতার জন্মদিনটি বাঙালি জাতিকে নতুন এক দিশা দেয়।দেশাত্মবোধে উদ্ধুদ্ধ করে।দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও অপরিসীম।বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।বঙ্গবন্ধু শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন।তিনি বিশ্বাস করতেন,আজকের শিশুই আগামীদিনের দেশগড়ার কারিগর।আগামীতে দেশগড়ার নেতৃত্ব তাদের হাতেই।শিশুরা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, মর্যাদা ও মহিমায় সমৃদ্ধ হোক-এটাই ছিলো বঙ্গবন্ধুর একান্ত প্রত্যাশা,চাওয়া।
বঙ্গবন্ধুর জীবনও শিশুদের জন্য এক শিক্ষণীয় বিষয়।তার অপরিসীম ত্যাগ ও তিতীক্ষার জন্য আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি।স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি।উল্লেখ্য,১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ প্রথমবারের মতো এই দিনটি শিশু দিবস হিসেবে সরকারিভাবে পালন করা হয়।
মাত্র ৫৫ বছরের সংগ্রামী জীবন তাঁর।রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর।এক রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসাবে।১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে বঙ্গবন্ধু বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুন।পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়।সবার আদরের খোকা।‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারী।রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। গ্রামের স্কুলে লেখাপড়ার হাতেখড়ি তার।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৩৪ পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেন।১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে কারাবরণ করেন।ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন।এখানেই সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন।১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশভাগের বছর তিনি বিএ পাস করেন।পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। যার মাধ্যমে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন।পরে ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন,৬৯’র গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন।তার নির্দেশনায় ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে।জন্ম হয় স্বাধীন..সার্বভৌম বাংলাদেশের।শেখ মুজিব হন বাঙালির জাতির পিতা।
৭৫’র ১৫ আগস্ট কালোরাতে ঘাতকদের বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
খোকা থেকে মুজিব এবং বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পথ মসৃণ ছিলো না। এই জন্য ইতিহাসের দুর্গমপথ পাড়ি দিতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। জেল-জুলুম আর নির্যাতনের সিঁড়ি বেয়ে এগোতে হয়েছে তাঁকে।মুজিব বড় হয়েছিলেন স্বীয় প্রতিভায়, তেজে, সাহসে, ভালবাসায়, সবলতায় এবং অঙ্গীকারে।সমাজের দুর্বল মানুষের প্রতি শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মুজিবের কৈশোরের সেই অঙ্গীকার এবং এর প্রতি বিশ্বস্ততা অক্ষুণ্ন ছিলো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছেও শ্রেণি অবস্থান বদল হয়নি তাঁর। পরিবর্তন ছিলো না চলন-বলন ও কথনে।নিজের নতুন জামা অন্যকে দান করা এবং নিজেদের গোলার ধান ক্ষুধার্তদের বিলিয়ে দেয়া কিশোর সাহসী মুজিবকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার অভিযোগে কারাগারে যেতে হয়েছিলো।পেরেছিলেন অবিভক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা ও মন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর সামনে দাঁড়িয়ে তাৎক্ষণিক ছাত্রদের দাবি আদায় করতে। গোপালগঞ্জের কৃষক আন্দোলনেও তাকে পাওয়া গেছে অগ্রণী ভূমিকায়।কলকাতায় গান্ধীর কুইট ইন্ডিয়া, নেতাজী সুভাষ বসুর হলওয়েল মনুমেন্ট ভাঙ্গা, ’৪৬ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ডা. বিধান রায়ের বাড়িতে হামলা চালালে তা প্রতিহত এবং পাহারা দেয়া,কলকাতা মাদরাসা ও লেডি ব্রাভোন কলেজে লঙ্গরখানার দায়িত্বে ছিলেন শেখ মুজিব। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে শেরে বাংলাকে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে মিছিল করেছিলেন মুজিব।১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশে মুজিব ফরিদপুর জেলার নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করেন সফলভাবে।
ঢাকায় শুরুতেই মুজিবকে পাওয়া গেল পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পটভূমি সৃষ্টিতে।১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত হলো গণতান্ত্রিক যুবলীগ। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগ। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুন জেলে বসেই নির্বাচিত হলেন আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক।১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ বাংলা ভাষার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে পিকেটিংরত অবস্থায় প্রথম বন্দী হন তিনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের আন্দোলন সমর্থনের কারণে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন শেখ মুজিব। মুচলেকা দেননি তাই ছাত্র জীবনের ইতি ঘটে সেখানে।
শুরু হলো জীবনের আরেক অধ্যায়।বাঙালির অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন।আবার বন্দী দীর্ঘদিন ধরে। ১৯৫০ থেকে দীর্ঘদিন বন্দী ছিলেন তিনি। ছাড়া পান ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি।যাদের রক্তের বিনিময়ে মুক্তি পেলেন তাদের ত্যাগ মুজিবকে আরো বেশী সাহসী ও গতিশীল করে তোলে।চুয়ান্নর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবের শ্রম বৃথা যায়নি।সেবার নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়।যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠন হলে শেখ মুজিব মন্ত্রী হন।এক পর্যায়ে মন্ত্রীত্ব না দলের দায়িত্ব-এ দুটির একটির মধ্যে তিনি বেছে নেন দলীয় নেতৃত্ব। যা এই অঞ্চলের রাজনীতির জন্য একটি দৃষ্টান্ত।১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধানে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবিকে উপেক্ষা এবং প্রদেশের নাম পূর্ববঙ্গকে পূর্ব পাকিস্তানকরণের প্রতিবাদে গণপরিষদ ত্যাগকারী মুজিব তীব্র প্রতিবাদ করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানকে ৯৮ শতাংশ স্বায়ত্বশাসন দেয়ার দাবিতে পল্টনে এক জনসভায় তার রাজনৈতিক গুরু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দীকেও ছেড়ে কথা বলেননি তিনি।এমন কী সেই সন্ধ্যায় সার্কিট হাউজ চত্ত্বরে নাগরিক সংবর্ধনায় নেতার সামনে প্রতিবাদের ভাষা ছিলৈা“একজন লোক প্রধানমন্ত্রী হলো আর স্বায়ত্বশাসন পেয়ে গেলাম..এটা মেনে নেয়া যায় না। সোহরাওয়ার্দী সাহেব যেন না ভাবেন যে,তাঁকে বাংলার সোল এজেন্সি দিয়ে দিয়েছে। নেতাকে সতর্ক হতে অনুরোধ করছি।’
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে চার দিনের মধ্যে শেখ মুজিবকে বন্দী করলেন।রাখলেন দেড় বছর।১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে মনি সিংহ, মানিক মিয়া, খোকা রায়দের সঙ্গে এক বৈঠকে মুজিব বলে ফেললেন,‘ওদের সাথে আর থাকা যাবে না’। স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করতে হবে।’সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর আইয়ুবের নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়বার জন্যও নেতা কেবলই মুজিবই।তিনি প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের চাইতে একধাপ এগিয়ে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের জন্য ঐতিহাসিক ছ’দফার দাবি পেশ করেন।আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করলেন। বন্দী রাখলেন দীর্ঘদিন মুজিব এবং তার প্রায় সব অনুসারীদের। পাঁয়তারা করলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসি দেয়ার।জনগণ মাঠে নামলো।শেষে জনতার শক্তির কাছে অস্ত্রের পরাজয়।মুজিব মুক্তি পেলেন।১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি পল্টনে শেখ মুজিবকে দেয়া হলো ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি।আর ক্ষমতা ছাড়তে হলো আইয়ুবকে।
এরপর তিনি আর মুজিব নন,বঙ্গবন্ধু। কৃতজ্ঞতার এ ঋণ শোধ করার জন্য তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।শেখ মুজিব আইয়ুবের উত্তরাধিকারী ইয়াহিয়ার কাছ থেকে প্রথমেই দুটি জিনিস আদায় করে নিলেন।প্যারেটির (পূর্ব ও পশ্চিমের সমান প্রতিনিধি) পরিবর্তে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন এবং জনগণের ভোটে নেতা নির্ধারণ। কৌশলে মুজিব জয়ী হলেন।সত্তরের নির্বাচনে জনগণ পাকিস্তানের ৩০০ আসনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ১৬৯-এর মধ্যে ১৬৭টিতে মুজিবের দল আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে।এই বিজয় শুধু পূর্ব পাকিস্তান নয়,সমগ্র পাকিস্তান শাসনের অধিকার পান তিনি।পাকিস্তানীরা ‘বাঙালি নেটিভ’ দ্বারা শাসিত হওয়া মেনে নেয়নি।
সাহসী মুজিব গভীর বিচক্ষণতার সঙ্গে দুর্বল অবস্থানে দাঁড়িয়ে বৃহৎশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল বের করেন।১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ থেকে ঘোষণা করলেন পাক সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ। ৭ মার্চ শত্রুর কামান ও বন্দুককে উপেক্ষা করে দশ লাখ লোকের উপস্থিতিতে-সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য জনগণের“মুক্তি ও স্বাধীনতার” স্পষ্ট ঘোষণা দেন।বলেন,‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’তিনি নির্দেশ প্রদান করেন..আমি যদি হুকুম দেবার না পারি, যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর(পাক সেনাবাহিনী) মোকাবিলা করার।গান্ধীর অসহযোগ সফল হয়নি।কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন একটি নজিরবিহীন ঘটনা।এমন কী বাস্তিল কারাগারের পতন,ফরাসী বিপ্ল¬ব, রুশ বিপ্ল¬ব, মাও সেতুং-এর লং মার্চ-এসব ঘটনার চাইতেও ব্যতিক্রম কৌশল ছিলো এই আন্দোলন। কার্যত ১৫ মার্চ পাক প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসতে মুজিবের অনুমতি নিতে হয়েছিলো। আর তার উপস্থিতিতে এতদাঞ্চলের চলছিল অঘোষিত মুজিবের সরকার।
২৫ মার্চ রাতে শত্রুরা যখন মুজিবকে বন্দী করে তখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।মুজিব সৈনিকরা তখন মুক্তাঞ্চলে,প্রতিরোধে।বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ১০ এপ্রিল ’৭১ তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি সৈয়দ নজরুল ও তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখরা গঠন করেন মুজিব নগর সরকার।প্রণয়ন হয় ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।মুজিবনগর সরকারের বিচক্ষণতায় ১৬ ডিসেম্বর ’৭১ পাকবাহিনীর ৯৩ হাজার সৈনিক রেসকোর্স ময়দানে আত্মসর্মপণের মাধ্যমে দেশ পাকহানাদার মুক্ত হয়।
মুক্ত স্বদেশে ফিরে মুজিব মাত্র ৩ মাসের মধ্যে মিত্র বাহিনীকে ফেরত পাঠানো, বিদেশী সৈন্য অবস্থানকালেও বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশসমূহের স্বীকৃতি আদায়, দশ মাসে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান প্রণয়ন,বিদেশী প্রত্যক্ষ সাহায্যে ছাড়াই মাত্র ৩ বছরে সীমাহীন আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলা, দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে সক্ষম হন। রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে বঙ্গবন্ধু দেখলেন কলোনিয়াল বুল দিয়ে রাজার মতো দেশ শাসন করা যায়,কিন্তু দু:খী মানুষের কল্যাণ আসে না।তাই তার দ্বিতীয় বিপ্লব শুরু হয় বিশ্বের শোষিত মানুষের পক্ষে।কিন্তু আন্তর্জাতিক এবং স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।এর নেতৃত্বে কারা ছিলো, সে ইতিহাস আজ জাতির কাছে অজানা নয়।
আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন করছেন দেশবাসী।দেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৭ কোটিই শিশু।জন্মদিনে আমার প্রত্যাশা..শিশুরা যাতে একটি সুষ্ঠু স্বাভাবিক উপায়ে বেড়ে উঠতে পারে,সেটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও পিতার মতো শিশুদের ভালোবাসেন। তাঁর সরকার শিশু অধিকার রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।শিশুর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের আগামীর সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন শিশু দিবস হিসেবে সার্থকতা অর্জন করবে।
লেখক : দুলাল আচার্য, সহকারী সম্পাদক, পিআইবি