ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন অভিভাবকহীন! উপাচার্য, প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষসহ এত শূন্য পদ নিয়ে এমন ক্যাম্পাস দেখা যায়নি কখনোই। রোববার ক্যাম্পাস খুললেও খোলেনি ক্লাসরুম। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় যারা নিপীড়নকারীদের পক্ষ নিয়েছেন, সেইসব শিক্ষকদের পদত্যাগসহ নানা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় এখনই স্বাভাবিক হচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।
প্রায় দেড়মাস পর রোববার খুললো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পহেলা জুলাই থেকে প্রত্যয় পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা। এতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এর জেরে ৫ আগস্ট সরকারের পতন হয়। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। এরই মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, আড্ডা-গল্পে ক্যাম্পাস মুখরিত হলেও খোলেনি ক্লাসরুম। বেশিরভাগ বিভাগের সামনেই ঝুলছে তালা। এরমধ্যেই উঠেছে দলবাজ শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবি
।একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এমন একজন ব্যক্তি যিনি সরকারের সব কথায় উঠতেন–বসতেন, এমন কোনো ব্যক্তিকে আমরা পরিচালক হিসেবে আর দেখতে চাই না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা আমাদের দুর্দিনে পাশে থাকেন নি, তাদের ক্লাস করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’
বিভিন্ন বিভাগ বন্ধ থাকলেও খুলেছে গ্রন্থাগার। পড়াশোনা শুরুর তোড়জোড়ও দেখা গেছে অনেকের মধ্যে। পড়ার টেবিলে ফিরলেও রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেও নতুন রূপে দেখার আকাঙ্ক্ষা উবে যায়নি শিক্ষার্থীদের।
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি এমন একজন ভিসি যিনি আমাদের দেখে শুনে রাখবেন, সন্তানকে বাবা মা যেভাবে আগলে রাখে সেভাবে। ভিসি একই ভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি খাতে হাত লাগাবেন। প্রত্যেকটা সেক্টর উন্নত করবেন। আমরা কিন্তু নেতা নির্ভর রাষ্ট্র চাই না, আমরা চাই নীতি নির্ভর রাষ্ট্র। শিক্ষার্থীদের সামনে ডাকসু নির্বাচন থাকবে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন থাকবে। নতুন যিনি ভিসি হবেন, তাকে নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাটা যেন বেশি হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই ক্যাম্পাসে আসেনি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, চেয়ার বাঁচাতে যারা ছাত্র-ছাত্রীদের বিপদের মুখে ফেলেছেন তারা এখন মুখ দেখাবেন কি করে?
এদিকে, আন্দোলনের সময় বিরোধী অবস্থানে থাকা অনেক স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদেরও পদত্যাগের দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণ আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর গত ১৬ জুলাই থেকে স্কুল, কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।