গণতন্ত্রের সূচনা স্কুল কেবিনেট নির্বাচন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানী ঢাকাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫ জানুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শিক্ষার্থীদের স্কুল কেবিনেট নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। শিশুকাল থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা, মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন শেখাতে, সহিষ্ণুতা শেখাতেই স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্বের পাশাপাশি শিক্ষকদের নানা কাজেও সহায়তা করবে। এ বছর স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭২টি এবং মাদ্রাসায় ৫২ হাজার ৩৩৬টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিতরা একজন প্রধানমন্ত্রী ও কয়েক জন মন্ত্রী নির্বাচন করে মন্ত্রিসভা গঠন করে। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের বিকাশ, গণতন্ত্রের চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের সব মাধ্যমিক ও দাখিল মাদ্রাসায় ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’ নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ২০১৫ সালে প্রথম স্টুডেন্টস কেবিনেট ম্যানুয়াল-২০১৫ ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালেও দেশের সব মাধ্যমিক ও দাখিল মাদ্রাসায় স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন আয়োজনের জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও মাদ্রাসা সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে ব্যানবেইসের পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্টুডেন্টস কাউন্সিল’ ধারণা সফল হওয়ায় ২০১৫ সালে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও টেকনিক্যাল স্কুলকে ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’ নির্বাচনের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। যেসব উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল নেই, সেখানে একাধিক হাইস্কুলকে মনোনীত করা হয়। সারা দেশের প্রায় ১ হাজার ৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্টস কেবিনেট গঠিত হয়েছিল।

২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২০২০ সালের স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনের লক্ষ্যে স্টুডেন্ট কেবিনেট ম্যানুয়াল, নির্বাচনি তপশিল ইতিমধ্যে আঞ্চলিক পরিচালক, আঞ্চলিক উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। সারাদেশে নির্বাচনের সব প্রস্তুতিও শেষ করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠানে গত ১২ জানুয়ারি বিভিন্ন দপ্তরপ্রধান, সব আঞ্চলিক পরিচালক, আঞ্চলিক উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

স্কুল কেবিনেট নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আটটি কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেগুলো হলো পরিবেশ সংরক্ষণ (বিদ্যালয়, আঙিনা ও টয়লেট পরিষ্কার এবং বর্জ ব্যবস্থাপনা); পুস্তক ও শিখনসামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং সহপাঠ কার্যক্রম; পানিসম্পদ; বৃক্ষরোপণ ও বাগান তৈরি; দিবস ও অনুষ্ঠান উদ্যাপন এবং অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন; আইসিটি। এই কেবিনেট মাসে কমপক্ষে একবার করে সভা করে। ছয় মাস পর পর সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে সাধারণ সভা করবে।

স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চাসহ একে অপরকে সহযোগিতা করা, শ্রদ্ধা প্রদর্শন, শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি ও ঝরে পড়া রোধে সহযোগিতা, পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিতসহ ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিগত বছরের মতো এবারও শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে আট সদস্যের স্টুডেন্টস কেবিনেট। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো ছাত্রছাত্রী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে। একজন ভোটার সর্বোচ্চ আটটি ভোট দেবে। প্রত্যেক শ্রেণিতে একটি করে এবং যেকোনো তিন শ্রেণীতে সর্বোচ্চ দুটি করে ভোট দিতে পারবে। প্রতি শ্রেণি থেকে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। পাঁচ শ্রেণিতে পাঁচজন নির্বাচনের পর তাদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত তিনজন নির্বাচিত হবে। বিধান অনুসারে এবারও নির্বাচনী প্রচারের জন্য কোনো রকম ছাপানো পোস্টার, ফেস্টুন, লিফলেট ব্যবহার ও দেয়াল লিখন করা যাবে না। তবে শিক্ষার্থীদের হাতে লেখা পোস্টার, ফেস্টুন, লিফলেট ব্যবহার করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানের সীমানা বা চত্বরের বাইরে প্রচার করা যাবে না। নির্বাচন পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়েই তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।

স্কুল কেবিনেট নির্বাচন চলা সময়ে কয়েকটা স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে কেউ কেউ নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কারো কারো মতে, সরকার ঘোষণা দিয়েছে আমরা পালন করছি, পজেটিভ বা নেগেটিভ কিছুই দেখি না। কুড়িগ্রামের এক শিক্ষক বলেন, ‘নির্বাচন হওয়া দিয়েই কাজ শেষ, সারা বছর এই নির্বাচনের কোনো ফলাফল বা প্রভাব থাকে না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেজগাঁও এলাকার এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ২০১৫ সাল থেকে কেবিনেট নির্বাচন শুরু হলেও শহরে অল্প-স্বল্প প্রচার আছে, গ্রামে নেই কিছুই। আর শহরের স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভোটের দিন অনেক অনুপস্থিত থাকে। নির্বাচন সম্পর্কে ওদের সঙ্গে শিক্ষকদের আলোচনা করা দরকার, ওদের এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানানো দরকার। ব্যক্তিগতভাবে স্কুল কেবিনেট নির্বাচনকে পজেটিভভাবে দেখি না কিছুই। মনে হচ্ছে এই নির্বাচন অল্প বয়সি শিক্ষার্থীদের মাঝে রাজনীতির জন্ম দিচ্ছে। আজ থেকে ২৮-৩০ বছর আগে আমরা এমন নির্বাচন করিনি, তবে ক্লাসে ক্যাপ্টেন হিসাবে দুজন নির্বাচিত হতো, যা শ্রেণিশিক্ষক ঠিক করে দিতেন। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব উঠে এসেছে অনেকবার। কিন্তু স্কুল কেবিনেট নির্বাচন রাজনীতির পথেই নিচ্ছে বলে মনে হয়। আবার এর অন্য দিকও দেখলাম। কয়েকজন ভোটার শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলি। জিজ্ঞেস করি, যাকে ভোট দিয়েছে কী বিবেচনা করে দিয়েছে। কেউ বলে লেখাপড়ায় ভালো কি না, তা বিবেচনা করেনি। ব্যক্তি হিসাবে কেমন তা ভেবে ভোট দিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলে, যে কাজ করার শক্তি-সামর্থ্য রাখে, তাকে দিয়েছি। এসব শুনে মনে হলো ওরাও বুঝতে শিখছে। নিজেরাই পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার হয়েছে, নিয়ম মেনে গণনা করেছে। উত্সাহ নিয়েই করেছে, কিছু শিখেছে, হয়তো এর গুরুত্ব আর প্রয়োজন রয়েছে।

লেখক : রহিমা আক্তার মৌ, সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002295970916748