গণিতছাড়া মাদরাসা শিক্ষকতা : আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিল চাই

মোঃ শান্ত ইসলাম |

বিজয়ের মাসে বিজয়ের সুরে স্মরণ করছি বাঙ্গালীর অধিকার আদায়ের স্বত্বাধিকারী ও সর্বাধিনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি তার জীবনের যৌবন কারাগারে কাটিয়েছেন বাঙ্গালীর অধিকার আদায়ের জন্য। বাঙ্গালী যখন অধিকার আদায়ের ৫০ বছরে রজতজয়ন্তী পালনের প্রহর গুনছে, ঠিক সে সময়ে শিক্ষক সমাজ তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রয়োজন অনুভব করছে। তাহলে কি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণ হয়নি বলা যায়? জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার নেপথ্যের কারণ কি? শিক্ষক সমাজ তা জানতে চায়।

বাংলাদেশ যখন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, মাদ্রাসা গুলো যখন আধুনিক শিক্ষার সাথে তাল মিলিয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাথমেটিশিয়ান তৈরিতে ভূমিকা রাখছে, ঠিক সে সময়ে সংশোধিত এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে “গণিত” বিষয়টি বাদ দেওয়া কি আধুনিক শিক্ষাকে বাধাগ্রস্থ করা নয়? দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো যখন গণিতে সর্বোচ্চ নম্বরের শর্ত জুড়ে দেয় তখন গণিত বাদ দিয়ে কি নতুন প্রজন্মের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে লেখাপড়া করার স্বপ্নকে কবর দেওয়া হচ্ছে না? শিক্ষা উপমন্ত্রী বলছেন, ‘কওমি মাদারাসাগুলোকে মূল ধারায় আনার উদ্যোগের কথা।

মাদরাসায় লেখাপড়া করে যখন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের সাথে প্রতিযোগীতা করার সক্ষমতা হারাবে, তখন কোনো অভিভাবক কি তার সন্তানকে মাদরাসায় লেখাপড়ার জন্য পাঠাবে? অবশ্যই না। কোন এক পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই গণিতের শিক্ষক। যখন স্ত্রী দেখলেন তার স্বামীর মন্ত্রীত্ব আছে কিন্তু দপ্তর নেই অর্থাৎ তার স্বামীর চাকুরি আছে কিন্তু পাঠদানের বিষয়টি নেই। তখন স্ত্রী বললেন, আমি আর যা-ই করি আমার ছেলে-মেয়েদের কোনদিন গণিত পড়াব না। বলুন তো কেন এ অবস্থা? কে এর জন্য দায়ী? অভিভাবক, শিক্ষক নাকি শিক্ষাব্যবস্থা? নাকি শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন কতিপয় নীচু মানসিকতার কর্মকর্তা? স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে মাদরাসায় চাকুরি নেওয়া শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন সিদ্ধান্ত কি জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে, নাকি জাতির অকল্যাণ ডেকে আনবে? সেটিই আজ শিক্ষকদের একমাত্র প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের “গণিত” শেখাতে দেওয়া হলো না, তাহলে কি চাকুরি পরীক্ষায় তাদের জন্য আলাদা প্রশ্ন করা হবে, নাকি পরীক্ষায় “গণিত” দেওয়া হবে না? তার উত্তর জানা এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। 

ধরে নিলাম মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের “গণিত” শেখার প্রয়োজন নেই, তাহলে কি মাদরাসায় কর্মরত গণিত প্রভাষকদের জেনারেল কলেজে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে, নাকি আরবী শিখতে হবে? সেটাও স্পষ্ট করা দরকার।

গণিতের মতো বিষয়টি বাদ দেয়ার বিষয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা শিক্ষক সমাজে ব্যাপক অস্থিরতা ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিষয়টি পূনঃবিবেচনার জন্য গত ২৯ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব বরাবর আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রকৃতির ভাষা গণিত। গণিত ছাড়া মাদরাসা শিক্ষকতা মুণ্ডবিহীন ধরেরই নামান্তর। 

লেখক: মোঃ শান্ত ইসলাম, গণিত শিক্ষক, বরিশাল। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002903938293457