গণিত পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রবেশে বাধা

মাদারীপুর প্রতিনিধি |

এসএসসির সাধারণ গণিত পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর নিয়ে শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। পরে পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট পড় ক্যালকুলেটর ভেতরে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুরের শিবচরের নন্দকুমার ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে।  এ ঘটনায়  উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। 

ক্যালকুলেটর নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশে বাধা দেয়ায় পরীক্ষা শেষে প্রতিবাদ মিছিল  ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরীক্ষার্থীরা। বাইরে ক্যালকুলেটর রেখে যাওয়ায় শতাধিক শিক্ষার্থীর ক্যালকুলেটর হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রবেশের অনুমতি থাকলেও শিবচরের নন্দকুমার ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রের সহকারী সচিব শিবচর নন্দকুমার ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ সব ধরনের ক্যালকুলেটর নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। 

শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের কান্না | ছবি: সংগৃহীত

তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ক্ষোভের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেন কর্তৃপক্ষ। পরে পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট পড় কেন্দ্র এলাকায় মাইকিং করে বাইরে রেখে যাওয়া ক্যালকুলেটর ভেতরে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। এরপরও শতাধিক শিক্ষার্থীকে ক্যালকুলেটর ছাড়াই গণিত পরীক্ষা দিতে হয়েছে। শিবচর নন্দকুমার কেন্দ্রে এক হাজার ৪৭ জন শিক্ষার্থী পরিক্ষা দিচ্ছে।

এদিকে নন্দকুমার ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থীরা শেখ ফজিলাতুন্নেসা বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। শিবচর নন্দকুমার নন্দকুমার কেন্দ্রে ক্যালকুলেটর নিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি এ খবর পেয়ে কেন্দ্র সচিব রফিকুল ইসলামের নির্দেশে শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতর থেকে শুধু নন্দকুমার ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ক্যালকুলেটর কেড়ে নেয়া হয়। এ কারণে একটি কেন্দ্রের প্রায় পুরো শিক্ষার্থী ও অপর কেন্দ্রের আংশিক শিক্ষার্থী সুষ্ঠভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি।

অভিভাবকরা জানান, শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিদ্যালয় ও নন্দকুমার ইনস্টিটিউশনের দুই প্রধান শিক্ষক প্রায় প্রতি বছরই অবৈধ সুযোগ নিয়ে তাদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল দেখানোর জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা করেন। ওই দুই শিক্ষকের কারণে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর বাবার অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। কিন্তু এসএসসি সাধারণ গণিত পরীক্ষার শুরুতে ক্যালকুলেটর নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় চরম বিভ্রান্তিতে পড়তে হলো। হলের মধ্যে প্রায় ১০মিনিট কান্নাকাটি করেছে আমার ছেলে।

শিবচর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন জানান, পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রবেশে বাধা দেয়ায় পরীক্ষার শুরুতেই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নন্দকুমার ইনস্টিটিউশন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করি।

নন্দকুমার ইনস্টিটিউশনের সহকারী কেন্দ্র সচিব মো. হারুন অর রশিদ বলেন, পরীক্ষার শুরুতে ক্যালকুলেটর নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি হয়েছে, তবে আমরা নির্দেশনা পাওয়ার পরে মাইকিং করে অভিভাবকদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্যালকুলেটর সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়েছি।

কেন্দ্র সচিব মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সকালে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ক্যালকুলেটর নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কিন্তু নন্দকুমার ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে কী কারণে শিক্ষার্থীদের নকল তল্লাশির নামে ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রবেশে নিষেধ করা হলো জানি না।

শিবচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিশ্বজিৎ রায় জানান, পরীক্ষা শুরুতে ক্যালকুলেটর নিয়ে বিভ্রান্তিকর নির্দেশ প্রদান করা সঠিক হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের গণিত পরীক্ষা ব্যাহত হয়েছে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। তবে ওই কেন্দ্রটিতে যদি সব ধরনের ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রবেশে নিষেধ করে সেটা অমানবিক হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে কথা বলে দেখছি, আসলে কি হয়েছে।

শিবচর উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন খান বলেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই হঠাৎ করে ক্যালকুলেটর নিয়ে প্রবেশে বাধা দেয়ায় অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046889781951904