গবেষণায় ব্যয় কমাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক বাজেটের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ গবেষণা খাতে ব্যয় করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ খাতে ব্যয় কমাচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) হিসাবে উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (১১ জুন) বণিকবার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন।

ইউজিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে গবেষণা খাতে দেশের ৬৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় হয়েছিল ৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ৭৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ খাতে ব্যয় করেছে ৭৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৩। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ব্যয় বাড়ছে প্রতি বছরই। এ ব্যয়ের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে ভবন ভাড়া ও বেতন-ভাতার মতো খাতগুলোয়। এর বিপরীতে গবেষণা, প্রকাশনা, বই সংগ্রহ ও শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগের মতো শিক্ষার মানোন্নয়নমূলক খাতগুলো থেকে যাচ্ছে অবহেলিত।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক ব্যয়ের অধিকাংশ অর্থ খরচ হচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে। গবেষণা ও বই কেনাসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে খরচ হচ্ছে কম। ভাড়া করা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ফলে আয়ের বড় একটা অংশ ব্যয় হচ্ছে ভাড়া ও মেইনটেন্যান্স বাবদ। এছাড়া খণ্ডকালীন শিক্ষক বেশি হওয়ার কারণেও ব্যয় বাড়ছে।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ গবেষণা খাতে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা রাখা হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই এখন গবেষণা খাতে ব্যয় কমাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) কথা। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৪৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তা নেমে দাঁড়ায় ৪২ লাখ ১১ হাজার টাকায়। কৃষি ও প্রযুক্তিবিষয়ক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ঘটেছে এর উল্টো।

একই চিত্র দেখা যায় আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ক্ষেত্রেও। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা ব্যয় নেমে আসে ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকায়।

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে গবেষণা খাতে ব্যয় করেছিল ৫০ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৯ লাখ টাকা।

শুধু গবেষণা নয়, গ্রন্থাগার ও ল্যাবরেটরি উন্নয়নের মতো বিষয়েও অমনোযোগিতা রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ৮৭টি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ও ল্যাবরেটরি খাতে ব্যয় করেছে ৯০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ৭৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ খাতে ব্যয় করেছে ৯০ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

গ্রন্থাগার ও ল্যাবরেটরি খাতে ব্যয় কমে যাওয়া উচ্চশিক্ষার জন্য ইতিবাচক নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। অথচ দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গ্রন্থাগার উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকে না। এতে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী নতুন বই সংযোজন করতে পারে না। এছাড়া যে হারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বাড়ছে, সে অনুযায়ী গড়ে উঠছে না গ্রন্থাগার অবকাঠামো। সব মিলিয়ে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র গ্রন্থাগার খুবই অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। গবেষণা না হওয়ায় ব্যয় কমবে, এটাই স্বাভাবিক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028178691864014