গবেষণার টাকা হুদাই বিলিয়েছে ছয় বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক |

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সরকার যখন কৃচ্ছসাধনে মনোযোগী ঠিক তখন গবেষণায় বরাদ্দ দেয়া টাকা ঢালাওভাবে শিক্ষকদের মাঝে বিলিয়েছে দেশের ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণা প্রস্তাব না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে বেতনের সঙ্গে সব শিক্ষককে পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ছাড়া এভাবে বরাদ্দ দেয়ার বিধান না থাকায় সরকার ওই টাকা ফেরত চাইছে। এতে বেজায় গোস্বা হয়েছে জাতি গড়ার কারিগরদের। টাকা ফেরত চাওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন তারা।

গবেষণার টাকা ঢালাওভাবে শিক্ষকদের বিলানো ছয় বিশ্ববিদ্যালয় হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুনির্দিষ্ট প্রস্তবনা না থাকলেও শিক্ষকদের বেতনের সঙ্গে পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।   

সূত্র জানায়, গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকদের গবেষণা বাবদ ‘হুদাই’ বিলানো টাকা ফেরত নেয়ার সুপারিশ করেছে। সে অনুসারে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়কে টাকা ফেরত দেয়ার চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। এ ছয়টির মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা শিক্ষকদের বিলিয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফারাজী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার টাকা হুদাই শিক্ষকদের বিলিয়েছিলো। তা ফেরতের সুপারিশ করা হয়েছে নিশ্চিত করে তিনি বলেন, মোট কত টাকা ফেরতের সুপারিশ করা হয়েছে তা বলতে পারছি না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে পারবো। 

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিধান হচ্ছে একজন শিক্ষক গবেষণা প্রস্তাব দিলে সে প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দের টাকা ছাড় করা। কিন্তু এ ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছাড়াই বেতনের সঙ্গে শিক্ষকদের পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছে।

যা বেআইনি। এর কোনো আইনিভিত্তি নেই। কোনো সুনির্দিষ্ট গবেষণা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকদের দুই, তিন, পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে এভাবে টাকা দিতে পারে না। বিষয়টি সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নজরে এসেছে। তারা টাকাগুলো ফেরত নেয়ার কথা বলেছেন। সে হিসেবে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষকদের বিলিয়ে দেয়া টাকা চার সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দিতে বলা হয়েছে। 

এদিকে গবেষণার বরাদ্দ থেকে ‘হুদাই’ নেয়া টাকা ফেরত দিতে চাচ্ছেন না শিক্ষকরা। টাকা ফেরত চাওয়ার নিন্দা জানিয়ে বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। টাকা ফেরত চাওয়ার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে। 

গতকাল মঙ্গলবার ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টাকা ফেরত চেয়ে পাঠানো চিঠিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘বিধিবহির্ভূত’ শব্দযুগল ব্যবহার করা হয়েছে, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। শিক্ষকদের বেতনের সঙ্গে ইউজিসির অনুমোদিত এবং বরাদ্দকৃত বাজেট থেকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ গবেষণা ভাতা দেয়া হতো, সেটা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একটি রীতি ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে এই ভাতা দেয়া বন্ধ করা হয়েছে, যা সাধারণ শিক্ষকরা সহজভাবে মেনে নেননি। কারণ গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত উন্নতির জন্য বাধ্যতামূলক, সকল শিক্ষককেই গবেষণা করতে হয়। তাই গবেষণা-ভাতা তাদের জন্য একটি যৌক্তিক প্রণোদনা, এটি তাদের অধিকার। তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। তাই প্রতিষ্ঠানের সিনেট ও সিন্ডিকেট অনুমোদিত বাজেট অনুসারে শিক্ষকদের দেয়া টাকা ফেরৎ চাওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এ রকম একটি সুবিধাকে হঠাৎ করে ‘বিধি-বহির্ভূত’ হিসেবে আখ্যায়িত করা এবং ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে লেখা চিঠিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে এর উল্লেখ ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শিক্ষকদের প্রচলিত নানা রকম সুবিধা কর্তনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যা সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে। সমিতি টাকা ফেরত চেয়ে পাঠানো চিঠি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার ঘোষণা দিয়েছে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050079822540283