গবেষণা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেই এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষণীয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উচ্চশিক্ষার পাদপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল লক্ষ্যই থাকে আন্তর্জাতিক মানের পড়াশোনা ছাড়াও বিশ্ব পরিসরের উচ্চতর গবেষণা। জ্ঞানচর্চার এমন মহান উদ্দেশ্য নিয়ে সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। সেখান থেকে যোগ্য শিক্ষার্থীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে আন্তর্জাতিক মানকেও আয়ত্তে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ১৯২২ সালে অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে তার শুভযাত্রা শুরু করে। সূচনাকাল থেকেই উচ্চশিক্ষার এই তীর্থ কেন্দ্রটি বিশ্বজনীন জ্ঞান সাধনায় শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। ক্রমেই এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবেও তার খ্যাতি বিস্তৃত করে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। 

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জন্মের শতবর্ষ পদার্পণের দোরগোড়ায় উপস্থিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আধুনিক বিজ্ঞান, গবেষণা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমৃদ্ধ যুগে তার আসনটিকে আগের মতো ধরে রাখতে পারেনি। এক সময় বিশ্ব র‌্যাংকিং-এ স্থান করে নেয়া এই শিক্ষাঙ্গনটি বর্তমানে বিশ্বের তলানির পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। গত শতাব্দীর শেষার্ধে এবং বর্তমান শতকের দুই দশক পার হওয়ার মূল্যবান সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আপত্তি উঠে আসছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নতর গবেষণা, সাময়িকী প্রকাশ থেকে শুরু করে আরও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বিশ্বসভায় স্থান করার মতো যোগ্যতা ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক জরিপকৃত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশের সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণা যা বিশ্বমানকে আয়ত্তে নিয়ে আসে তেমন কর্মযোগের ধারাবাহিক অনুপস্থিতি সংশ্লিষ্ট উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক বিপন্ন অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে। উচ্চশিক্ষার এমন বেহাল দশাকে বিবেচনায় রেখে ইউজিসির প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, মহান ব্রতে বিশ্ববিদ্যালয় একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত হয় সেখানেই সমস্যার মূল শিকড়। আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ এমন সঙ্কট উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে নতুন মাত্রায় ঢেলে সাজানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি প্রতিবেদনটির সঙ্গে সহমত পোষণ করে অভিমত দেন- আসলে দেশের উচ্চশিক্ষার জ্ঞানচর্চায় এখন কোন বিশ্বমানের গবেষণা পরিচালিত হয় না।

জ্ঞান সাধনায় এমন হতাশাব্যঞ্জক চিত্র সত্যিই দুঃখজনক। আর সাময়িকী প্রকাশের ক্ষেত্রেও কোন উন্নতমানের প্রবন্ধ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরবর্তী উচ্চ পদে আসীন হতে গেলে হয় পিএইচডি ডিগ্রী নতুবা কোন দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ জরুরী হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণে নিজেদের প্রমোশনের তাগিদে তড়িঘড়ি করে যে প্রবন্ধ প্রকাশ পায় সেখানে সত্যিকার অর্থে বিশ্বমানের কোন উপাদান খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধুু তাই নয়, প্রকাশনার ক্ষেত্রেও রয়েছে নিজের পছন্দ মতো লেখক বেছে নেয়ার সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত নিয়ম বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে। আর এসব অব্যবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং থেকেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান অনেক দূরে। যেখানে সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উচ্চ শিক্ষার গবেষণার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে সেখানে শিক্ষকদের মধ্যেই এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষণীয়।

গবেষণা একদম হচ্ছে না তা বলা যাবে না, তবে আন্তর্জাতিকমানকে ধরতে পারছে না। তার ওপর আছে অপরাজনীতির কালো ছায়া। যা উচ্চ শিক্ষার মূল কার্যক্রমকে নানা মাত্রিকে বিঘ্নিত করছে। বাংলাদেশের আর এক উচ্চশিক্ষার তীর্থস্থান বুয়েটও এখন তার বিশ্বমানকে হারাতে বসেছে। সেখানে নির্যাতনে মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যার ব্যাপারটিও সবাইকে শঙ্কিত করে তুলেছিল, যা বুয়েটে হবার কথা ছিল না। বরং মেধা ও মননের এই বৃহৎ কার্যক্রমটি উন্নতমানের লেখাপড়া ছাড়াও সমৃদ্ধ গবেষণাও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখা জরুরী ছিল। সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্রগুলোকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়ে বিশ্বমানে উন্নীত করা সময়ের অনিবার্য দাবি। এর ব্যত্যয় জাতিকে আরও বিপন্ন করে তুলতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে - dainik shiksha একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের - dainik shiksha ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম - dainik shiksha থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান - dainik shiksha প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029261112213135