বাংলাদেশ সরকারি এক গবেষণায় গরুর দুধ এবং দই এর মধ্যে বিপদজনক অণুজীব, এন্টিবায়োটিক, কীটনাশক এবং সিসা পাওয়া গেছে। গবেষণার ফলাফল প্রকাশের পরদিন সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে এব্যাপারে একটি জরিপ প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে তাদেরকে দেওয়ার জন্যে।
দুধের মধ্যে এসব রাসায়নিক কীভাবে আসছে সেটা খুঁজে বের করতে এবং এটা বন্ধে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সেটাও জানাতে বলেছে আদালত। সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি এই গবেষণাটি চালিয়েছে।
কী পাওয়া গেছে
গবেষণায় দেখা গেছে, গরুর দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অণুজীব রয়েছে ৯৬ শতাংশ দুধে। এদিকে প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে পাওয়া গেছে টেট্রাসাইক্লিন। একটি নমুনায় রয়েছে সিসা । একই সঙ্গে ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন অণুজীব পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্যের জন্যে কতটা ক্ষতিকর ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক শারমিন রুমি আলীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এর ফলে অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে যাচ্ছে, আমরা রোগে আক্রান্ত হলে এই এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করলে আর কাজ হবে না। সেটা খুবই বিপদজনক।" তিনি জানান, শরীরে সিসা বেশি প্রবেশ করলে ব্রেনের ক্ষতি হয়। কীটনাশক সমস্যা সৃষ্টি করে খাদ্যনালীতে।
গরুর দুধ এবং দই-এ এসব কিভাবে আসছে?
শারমিন রুমি আলীম বলছেন, অণুজীব সাধারণত মিশে যেতে পারে দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং প্যাকেজিং- এর সময়। তিনি বলেন, "দুধ যখন প্রস্তুত করা হচ্ছে, পাস্তুরিত করা হচ্ছে, প্যাকেজিং করা হচ্ছে তখন প্যাকেজিং করার জিনিসপত্রের মধ্যে যদি কোন অণুজীব থাকে তখন সেটা দুধে চলে আসতে পারে। এই অণুজীব বাতাস থেকেও আসতে পারে, প্যাকেটটা যদি ঠিক মতো বন্ধ করা না হয় তখনও হতে পারে। আবার দুধকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেখান থেকেও ঢুকতে পারে।"
তিনি বলেন, গরুকে যে খাবার দেওয়া হয় তার মধ্যেও এন্টিবায়োটিক ও কীটনাশক থাকতে পারে। সেসব খাবার থেকেও দুধে এগুলো চলে আসতে পারে। বাংলাদেশে এক সময় শুধু ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাড়িতে গরু পালা হতো। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও প্রচুর গরু পালন করা হচ্ছে। এসব গরুর দুধ থেকে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য সামগ্রী।
কী করছে কর্তৃপক্ষ?
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য মাহবুব কবির বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, " আগামী সপ্তাহে আমরা সবাইকে নিয়ে বসবো। আলাপ আলোচনা করে একটা পথ বের করবো। প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডাকা হয়েছে।" "একা এটা করা সম্ভব না। কারণ ফিল্ড দেখছে একটা বিভাগ, আমরা সমন্বয় করছি, নিয়ন্ত্রণ করছি কিন্তু সবার সাহায্য লাগবে," বলেন মি. কবির।
সূত্র: বিবিসি