গর্বিত গ্রাজুয়েট নয়,গর্বিত নাগরিকই কাম্য

রাজিমুল হক রাকিব |

সাধারণত উচ্চশিক্ষার আনুষ্ঠানিকতা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার মাধ্যমে শেষ হয়। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করলে সমাজ আপনাকে উচ্চশিক্ষিত হিসেবে স্বীকৃতি দিবে অর্থাত্ আপনি সমাজের একজন সচেতন নাগরিক যার কাছ থেকে সমাজ বা দেশ অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। এবার আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায়। এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিঃসন্দেহে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশের মেধাবী সন্তানরা পড়াশোনা করে এখানে। আর এই মেধাবীদের দিকে তাকিয়ে আছে সমগ্র দেশ। যারা দেশ পরিবর্তন করবে, তাদের মেধা ও যোগ্যতা দ্বারা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে। তারা দেশকে স্বপ্ন দেখাতে শিখাবে।

এবার একটা গতানুগতিক কথা বলতেই হচ্ছে। আমাদের শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা পর্যন্ত দেশ আমাদের জন্য কত টাকা খরচ করে তা আমরা ভালোই জানি। দেশের কোনো কি দরকার ছিল ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ফ্রি বই দেওয়া! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি প্রতিষ্ঠানে মাত্র ২৫০০০-৩০০০০ টাকায় অনার্স সম্পন্ন করা!! দেশ যেহেতু আমাদের জন্য এত খরচ করে, দেশও নিশ্চয় আমাদের নিকট থেকে কিছু প্রত্যাশা করে। একটা সহজ কথা বলি। মা-বাবা আমাদের কষ্ট করে মানুষ করে। আমাদের জন্য অনেক টাকা খরচ করে। আর আমরা মানুষ হওয়ার পর তাদের প্রতি যে দায়িত্ব তা পালন না করলে যেমন হবে ঠিক দেশের প্রতিও তা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় গত অক্টোবর। যেখানে ২১ হাজার ১১১ জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করে। তাদেরকে এখন সবাই গর্বিত গ্র্যাজুয়েট হিসেবে গ্রহণ করছে। ফেসবুকে কিছু ছবি ভাইরাল হতে দেখা যায়। একটা ছবিতে দেখা যায় একজন গ্র্যাজুয়েট তার গাউনটা একজন রিকশা চালকের গায়ে পড়িয়ে স্যালুট করছে। সত্যি তারা স্যালুট পাওয়ার যোগ্য। তাদের ঋণের ভার বহন করে আজকে আপনি গ্র্যাজুয়েট।

একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে দেশের উচ্চ পদগুলো দখল করবেন নিঃসন্দেহে। যেখানে আপনার উপর নির্ভর করবে হাজারো মানুষের ভাগ্য। যাদের টাকায় আপনি এতটুকু এসেছেন আর আপনি যদি তাদের সাথে প্রতারণা করেন আপনি গর্বিত গ্র্যাজুয়েট ঠিকই হবেন কিন্তু আসলে আপনি একজন গর্হিত নাগরিক হবেন। আপনাদের দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে, আপনাদের অনুসরণ করবে। এভাবে আপনি শুধু নিজেকে না পুরা সমাজ কিংবা জাতিকে অধপতনের পথে নিয়ে যাবেন বা জাতিকে গর্হিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলবেন। আপনারা যদি নিজ নিজ স্থান হতে প্রত্যেকে নিজেকে গর্বিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলেন দেশ বা সমাজ সঠিক রাস্তায় চলবে। সমাজে কালো হাত আর থাকবে না। আপনার শিক্ষার আলোই একমাত্র ওই কালো হাত দূর করতে পারে। আমাদের আলো থাকতে কেন কালো হাতকে বেছে নিব!!!

আমাদের সমাজের এই দুরাবস্থা মূলত প্রাক্তন গর্বিত গ্র্যাজুয়েটদের কারণে। কারণ তারা গর্বিত নাগরিক ছিল না। তাদের হাত এখনো কালো। এখন আমাদের আলো তাদের কালো হাত দূর করবে। মানুষের অন্ধত্ব বা অন্ধ অনুকরণ দূর হবে। যার জন্য প্রয়োজন গর্বিত নাগরিক। সমাজ গর্বিত গ্র্যাজুয়েট আর চায় না কারণ গর্বিত গ্র্যাজুয়েট আগেও ছিল এবং সমাজে নৈরাজ্যগুলোতে তাদের ভূমিকাও কম না। তাই সমাজ এখন গর্বিত নাগরিক চায়। আমাদেরও প্রত্যাশা প্রত্যেক গর্বিত গ্র্যাজুয়েট গর্বিত নাগরিক হবে। তারা সমাজের সকল অন্ধকার দূর করবে।

 

লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0079147815704346