'গলায় চাকু ধরে স্যার বলে কাউকে জানালে মেরে ফেলব'

নাটোর প্রতিনিধি |

'সবার খাতা দেওয়া হলেও আমার খাতা দেয়নি। এর পর আমার মুখ চেপে ধরে জোর করে নিয়ে যায়। ব্যাগ থেকে টেপ বের করে আমার মুখ আটকে দেয়। একটা সিরিঞ্জ বের করে পা থেকে রক্ত বের করে নেয়। কাউকে না বলার জন্য গলায় চাকু ধরে স্যার আরও বলে, কাউকে জানালে তোকে মেরে ফেলব।' 

এভাবে শনিবার (২ জুন) স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সামনে নিজের ওপর করা লোমহর্ষক অত্যাচারের বর্ণনা দেয় নাটোরের মরিয়ম স্কুলের কেজি-২-এর এক ছাত্রী। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের ছয় বছরের শিশু ওই স্কুলের শিক্ষানবিশ শিক্ষক আশিস সরকারের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে ও বাইরে বিভিন্ন সময় শিশুটিকে ডেকে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত মাসে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন শিশুটির মা। এ বিষয়ে নাটোরের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক পলাতক। তবে জানা গেছে, সামনাসামনি না এলেও আশিস প্রধান শিক্ষিকা নিভা গোমেজসহ মিতা সাহা ও সালমা খাতুন নামের তিন শিক্ষিকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।আশিস নাটোরের বঙ্গজ্বল এলাকার অশ্বিনী সরকারের ছেলে শনিবার (২ জুন)  সকালে শিক্ষক-অভিভাবক-ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত সালিশ বৈঠকে শিশুটির মা অভিযোগ করেন, শিক্ষক আশিস তার শিশুকন্যার সঙ্গে যে আচরণ করত, তা শিক্ষকসুলভ নয়। কিছুদিন আগে স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে শিশুটিকে জোরপূর্বক শ্রেণিকক্ষ থেকে তুলে স্কুলের নির্জন স্থানে নিয়ে যায় আশিস। 

সেখানে নিয়ে মুখ আটকে সিরিঞ্জে করে রক্ত নেয় সে। মেয়েটি চিৎকার করলে তার সহপাঠীরা এগিয়ে এলে তাকে ছেড়ে দেয় আশিস। এ সময় শিশুটির বাঁ হাতের একটি আঙুল কেটে জখম করে। গত ১২ মে সকালে মেয়েটিকে ডেকে স্কুলের টয়লেটের সামনে নিয়ে আসে। সে সময় গুরু নামের এক লোকও স্কুলে প্রবেশ করে। সেদিনের ঘটনা কাউকে বললে শিশুটিকে ড্রেনে কেটে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয় আশিসের সঙ্গে থাকা গুরু নামের ওই লোক। বস্তা থেকে ড্রিল মেশিন বের করে পেটে ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় সে।

এদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে বিভিন্ন উপায়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে ওই স্কুলে গিয়ে আশিসের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা নিভা গোমেজ প্রথমে তার সম্পর্কে জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।পরে প্রধান শিক্ষিকা জানান, স্কুলটিতে আগত শিক্ষকদের কয়েক মাস শিক্ষানবিশ শিক্ষক হিসেবে রেখে পরে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। সেভাবেই আশিস পাঠদান করছিল।

অভিযোগের ব্যাপারে আশিসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বায়োডাটায় দেওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। আশিসের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত একই স্কুলের শিক্ষক মিতা সাহা মোবাইল ফোনে বলেন, আশিসের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আশিস ভালো ছেলে এবং ষড়যন্ত্রের শিকার। তার বিরুদ্ধে শিশু ও অভিভাবকদের অভিযোগের নেপথ্যে অন্য কিছু থাকতে পারে।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই আশিসের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ভুক্তভোগী ও অভিভাবকরা বিষয়টি তাকে জানায়।জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ হাতে পাননি বলে জানান। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007084846496582