গালি দিতে নিষেধ করায় শিক্ষককে মারধর

নাটোর প্রতিনিধি |

গালি দিতে নিষেধ করায় নাটোরের এক মাদরাসার সহকারী অধ্যাপককে বেধড়ক মারধরের পর অপহরণ করে ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে আটক রাখার ঘটনা ঘটেছে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ফোন পেয়ে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার হয়বতপুরের গোলাম ইয়াছিনিয়া ডিগ্রি ফাজিল মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ওরফে কালুসহ (৬০) সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক মো. জাফর বরকত (৫২) নিজে বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আজ সকালে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান এবং তাঁর ছেলে মো. জয়সহ প্রায় ১৫ জন ওই মাদরাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে খুঁজতে থাকেন। ওই সময় অধ্যক্ষ বাইরে থাকায় তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষ ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ করে গালিগালাজ করেন। এ সময় মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জাফর বরকত তাঁদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করেন। এতে তাঁরা আরও ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় চেয়ারম্যানের সহযোগীরা লাঠি দিয়ে ওই শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করেন।

পরে ছাত্র-শিক্ষকদের সামনে ওই শিক্ষককে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যান চেয়ারম্যানের সহযোগীরা। দুপুর ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষক লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে গিয়ে শিক্ষক জাফর বরকতকে একটি কক্ষে আটক করে রাখতে দেখেন। ওই শিক্ষকেরা জাফর বরকতকে ছাড়িয়ে আনতে ব্যর্থ হয়ে ৯৯৯–এ কল করেন।

খবর পেয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ও পুলিশের একটি দল ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করেন। সেখান থেকে তাঁকে নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়।

খবর পেয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদও দুপুরে ঘটনাস্থলে যান। তিনি মাদরাসায় উপস্থিত শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন, কাল বৃহস্পতিবার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ক্লাস হবে। সঙ্গে পুলিশি পাহারা থাকবে। সবাই যেন ক্লাসে উপস্থিত থাকেন। এ সময় শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

বিকেল পাঁচটার দিকে আহত শিক্ষক নাটোর সদর থানায় এসে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু এবং তাঁর ছেলে মো. জয়সহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। তবে ঘটনার আসামিরা সবাই গা ঢাকা দেওয়ায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

আহত শিক্ষক মো. জাফর বরকত বলেন, তিনি ওই মাদরাসায় ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। সম্প্রতি মাদরাসা পরিচালনা কমিটি পরিবর্তন করার জন্য চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান অধ্যক্ষকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। একই উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সকালে মাদরাসায় যান। অধ্যক্ষকে না পেয়ে তিনি অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করছিলেন। বিরক্ত হয়ে তিনি গালি দিতে নিষেধ করেন। এতে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইউপি ভবনে আটকে রাখেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম বলেন, ‘নাটোর-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম আমাকে এই মাদরাসার সভাপতি করেছেন। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগে পরিবর্তন আসার পর তাঁর প্রতিপক্ষরা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানকে এখানে সভাপতি করার তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। এর অংশ হিসেবেই আজ মাদরাসায় গিয়ে একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে মারধর করেছে। পুলিশ সুপার নিজে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে হয়তো ওই শিক্ষক মারাই যেতেন।

ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীদের এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে চেয়ারম্যানের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। আমি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছি। মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের যেখান থেকেই হোক গ্রেপ্তার করা হবে। কেউ ছাড় পাবে না।’

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ওই মাদরাসার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য কাল সকাল থেকে ওই এলাকায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030698776245117