গায়ে আগুন দেয়া সেই কলেজছাত্রীর মৃত্যু

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহীর শাহ মাখদুম থানার সামনে নিজের গায়ে আগুন দেয়া কলেজছাত্রী মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

ওই ছাত্রীর নাম লিজা রহমান (১৯)। স্বামীর নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ অভিযোগ না নেয়ায় শনিবার ক্ষোভে শাহ মাখদুম থানার সামনেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মাহুতি দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

লিজা গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রধানপাড়া এলাকার আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের পালিত মেয়ে। লিজা রাজশাহী মহিলা কলেজের বাণিজ্য দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। নগরীর পবাপাড়া এলাকার একটি মেসে ভাড়া থাকতেন থাকতেন তিনি।

লিজার সহপাঠীরা জানান, লিজা প্রেম করে বিয়ে করেন। তার স্বামীর নাম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার খানদুরা গ্রামের খোকন আলীর ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। থাকেন রাজশাহীতে একটি ছাত্রাবাসে।

পরিবারকে না জানিয়েই সাখাওয়াত হোসেন লিজাদের গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে গত ২০ জানুয়ারি তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও পরে কলহ দেখা দেয়। পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় সাখাওয়াত লিজাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেননি। একপর্যায়ে সাখাওয়াত স্ত্রী লিজার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে চলে যান।

গত জুলাই মাসে লিজা সাখাওয়াতের খোঁজে ছুটে যান চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে। লিজা স্বামীল বাড়িতে গেলে সাখাওয়াত বাড়ি ছেলে পালিয়ে যান।

পরে লিজা নাচোল থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ সাখাওয়াত ও তার বাবাকে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে লিজাকে পাঠিয়ে দেন। এরপর তারা কয়েকদিন একসঙ্গে থাকেন। পরে সাখাওয়াত রাজশাহীতে ফিরে আবারও স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

অভিযোগে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে লিজার সঙ্গে দেখা করেন সাখাওয়াতের এক ভগ্নীপতি। ওই সময় সাখাওয়াতও সঙ্গে ছিলেন। তারা উভয়েই লিজাকে মারধর করেন এবং এ বিষয়ে অভিযোগ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই থেকে লিজা নগরীর শাহ মখদুম থানায় অভিযোগ দেয়ার চেষ্টায় গত কয়েকদিন ধরে ঘুরছিলেন।

লিজার বন্ধুরা জানান, তিনি শনিবার দুপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আবারও শাহ মখদুম থানায় যান। সেখানে ডিউটি অফিসারকে অনেকবার অনুরাধ করেন তার অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য। ওসির সঙ্গে শেষে দেখা করেন কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে পাগল বলে পাত্তা না দিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন।

থানা থেকে বের হয়েই কাছের একটি দোকান থেকে কেরোসিন কিনে থানার সামনে আসেন। সেখানে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। মুহূর্তের লিজার শরীর পুড়ে যায়। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভায়। পরে প্রায় অচেতন অবস্থায় লিজাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

রাজশাহী মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. অসীম কুমার জানান, আগুনে লিজার শরীরের বেশিরভাগই পুড়ে গিয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ কারণে তাকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, আগুনে লিজার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।

এরপর থেকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটেই চিকিৎসাধীন ছিলেন লিজা। অবশেষে আজ সকালে মৃত্যুর কাছে হার মানেন এই তরুণী।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে - dainik shiksha স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হতে পারে কাল - dainik shiksha প্রাথমিকের দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হতে পারে কাল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির - dainik shiksha বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট - dainik shiksha বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন - dainik shiksha একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026469230651855