গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভোগান্তি কি আরও বাড়লো?

মো. ফজলুল করিম |

বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমার উদ্বেগ ছিল। এ নিয়ে প্রথম আলোর শিক্ষা পাতায় দু–একবার লিখেছিলাম। শুরু থেকেই আমার কাছে মনে হয়েছে, যথেষ্ট হোম ওয়ার্ক না করেই আমরা অভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতি বা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু করেছি। সংগত কারণেই বুয়েট থেকে শুরু বাকি চারটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় এই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। শুক্রবার  (১৮ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রছাত্রীর ভোগান্তি কমানো। এটা পরিষ্কার, বাস্তবে তার প্রতিফলন হয়নি। বরং ভোগান্তি বেড়েছে অনেক বেশি।

১. গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সময় অনেক ছাত্রকে অন্য জেলা বা অন্য বিভাগে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। অথচ এই অভিন্ন পরীক্ষার একটা উদ্দেশ্য ছিল, ছাত্ররা যার যার জেলায় পরীক্ষা দেবে।

২. খরচের কথা চিন্তা করলে সেটিও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার সময় একবার টাকা দিয়ে ভর্তি ফরম কিনতে হয়েছে। ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর আবার যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, সেখানে টাকা দিয়ে ফরম কিনতে হয়েছে।

৩. শুধু ফরম কেনা না, ভর্তির টাকাও বেড়েছে। বেড়েছে সিদ্ধান্তহীনতা। ধরা যাক, একজন ছাত্র পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চয়েস দিয়েছিল। ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় যখন পর্যায়ক্রমে ভর্তির সার্কুলার দিচ্ছে, তখন এই ছাত্রকে হয়তো সুযোগ পাব কি না বা ভালো সাবজেক্ট পেতে পাঁচ জায়গায়ই ভর্তি হচ্ছে। আর একটু পরিষ্কার করে বললে, সে প্রথমে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কাঙ্ক্ষিত বিষয় না পেয়েও ভর্তি হতে হয়, যদি পরেরগুলোতে না পায় এই ভেবে। পরে যখন মাইগ্রেশন হয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো বিষয় পায়, তখন তাকে আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করতে হয়। এভাবে ছাত্রদের খরচের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপও বেড়েছে।

৪. এবার আসি ভর্তি প্রক্রিয়ায়। সেই কবে পরীক্ষা হয়েছে। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। কবে ক্লাস শুরু হবে এখনো বলা সম্ভব নয়। আসন পূরণ না করে ক্লাস শুরু করা যাবে না। সব আসন পূরণ করতে করতে বেশ লম্বা সময় লাগবে। এরই মধ্যে পরের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।

৫. কথা হলো, মেডিকেল কলেজগুলো পারলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন পারবে না? আমি বলব, মেডিকেল কলেজগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা করা উচিত নয়। ওখানে কেন্দ্রীয়ভাবে নেওয়া সম্ভব, কারণ সব মেডিকেল কলেজে এই কোর্স পড়ানো হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয় আছে, তাই ছাত্রদের পছন্দের ভিন্নতা বহুমাত্রিক। এই জটিলতার কারণে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে একটা লম্বা সময় দরকার হবে। এতে করে সেশনজট বাড়বে। ছাত্রদের পাস করতেও লম্বা সময় লাগবে।

সবশেষে বলতে চাই, এ কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযোগী নয়। সময় ও খরচের সঙ্গে সঙ্গে সেশনজট একটি বড় ইস্যু। তা ছাড়া ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে সম্পন্ন হওয়ার কারণে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বকীয়তা হারাবে। ভর্তি থেকে শুরু করে সবকিছুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা না থাকলে তাদের আত্মোন্নতির জায়গা ক্রমে সংকুচিত হবে।

সবকিছু বিবেচনা কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমরা আবার ভেবে দেখতে পারি। যে সিস্টেম একটি যৌক্তিক পরিবর্তন আনতে পারবে না, সেই সিস্টেম আঁকড়ে ধরে রাখা মনে হয় না ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু হবে।

লেখক: মো. ফজলুল করিম, সহযোগী অধ্যাপক, বিজিই বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভূত-পূর্ব ফ্যাকাল্টি, কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা - dainik shiksha জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি - dainik shiksha মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার - dainik shiksha ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007368803024292