পরিমাণগত শিক্ষার চেয়ে গুণগতমানের শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। অর্থাৎ কোয়ান্টিটি আছে। কিন্তু গুণগতমানের শিক্ষা নেই। এখন আমাদের গুণগতমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
শনিবার ২৫ জানুয়ারি দুপুরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ এসব কথা বলেন। এর আগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২০ পালন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়কে আল্পনা অঙ্কন, কেক কাটাসহ নানা আয়োজন করা হয়।
শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘ইভিনিং কোর্স বন্ধ করতে হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য শিক্ষার্থীদের কষ্ট দিতে পারি না। এটা শিক্ষকদের ভূমিকা হতে পারে না। সমাজে শিক্ষকদের সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে গুণগতমানের শিক্ষা ফিরে আসবে। আগের দিনের মতো শিক্ষকদের মান মর্যাদা ফিরে আসবে। যেভাবে আমাদের শিক্ষকেরা সম্মান পেতেন, আমরা সেইভাবে সম্মান পাবো। এ জন্য শিক্ষকদেরই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারা গবেষণাকে ফোকাস করছে। যেটা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। আমরা জানি উচ্চ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে গবেষণা। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সেদিকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
সভাপতির বক্তব্যে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো.
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অপরাজনীতিমুক্ত শিক্ষা ও গবেষণা সহায়ক পরিবেশের কারণেই যবিপ্রবি আজকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য আমরা চাকরি চাইবো না, চাকরি দেব। তিনি বলেন, যে কর্মকাণ্ড জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের পরিপন্থী, যা সোনার বাংলা গড়ার পথে অন্তরায়। যে কর্মকা- ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেয়, দুর্নীতি-সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়- আমি তাকে রাজনীতিই মনে করি না। র্যাগিং নামক জঘণ্য মানসিক বৈকল্যকে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে নির্মূল করা হয়েছে। তারপরও র্যাগিংয়ের মতো ভয়াবহ ব্যাধিতে কেউ জড়িত থাকলে বা সহযোগিতা করলে, তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। ’
যবিপ্রবি উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, প্রশাসনসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্য, অ্যালামনাইবৃন্দ এবং সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। একইসঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎকর্ষের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যশোর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, যবিপ্রবির ট্রেজারার অধ্যাপক মো. আব্দুল মজিদ, ডিনস কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ আনিছুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. মীর মোশাররফ হোসেন, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারি, কর্মচারী সমিতির সভাপতি এস এম সাজেদুর রহমান, সাবেক শিক্ষার্থী সঞ্জয় ব্যানার্জী বাপ্পা, যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা আফিকুর রহমান অয়ন ও সোহেল রানা, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজনিন সুলতানা প্রমুখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম সামিউল আলম ও ফারহানা ইয়াসমিন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও মার্কেটিং বিভাগের ‘স্মার্ট ক্লাস রুম’ উদ্বোধন করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। একইসঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার, হ্যাচারি অ্যান্ড ওয়েট ল্যাব, শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামসহ বিভিন্ন গবেষণাগার ঘুরে দেখেন।