গুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কলকাতা হাইকোর্টের বাঙালি বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য স্যার গুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজ জন্মদিন।

গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে কলকাতার নারকেলডাঙার এক অসচ্ছল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। মাতা সোনামণি দেবী ধর্মপ্রাণ মহিলা ছিলেন। তিন বৎসর বয়সে গুরুদাস পিতৃহীন হলে অসহায় জননীর স্নেহছায়ায় ও তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেন। প্রথমে ভর্তি হন ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ও পরে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুলে (হেয়ার স্কুলে)। এখান থেকে ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম হন। স্কটিশ চার্চ কলেজ ও পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পরীক্ষায় প্রথম হয়ে স্নাতক ও ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর (এমএ) হন। ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আইন পরীক্ষাতেও সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেন। পরের বছর ল'অনার্স পাস করেন ।

শিক্ষান্তে প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং গণিতের অধ্যাপক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। এখানে কর্মরত অবস্থাতেই বহরমপুর কলেজে অধ্যাপনার সুযোগ হয়। বহরমপুরে অবস্থান কালে ওকালতিও শুরু করেন। 
জননীর আগ্রহে অবশেষে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ডি.এল. উপাধি পান এবং পরের বৎসরেই বিচারপতির পদ লাভ করেন। ষোল বছর তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি অনারারি ম্যাজিসেট্রট, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কমিশনার, বাংলার ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হয়েছিলেন। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাকুর আইন অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও আইন পরীক্ষক ও তিন বৎসর জন্য সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। এ সময় তিনি পরীক্ষা পরিচালনা ও পাঠ্যপুস্তক নির্বাচনে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ লাভ করেন। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে

বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য ও ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে ল' ফ্যাকাল্টির ডিন হন।


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজে তার প্রভূত অবদান ছিলো এবং আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা'র চর্চা আবশ্যিক ও বাংলা ভাষার সকল শিক্ষা প্রচলনের প্রচেষ্টায় তার বিপুল অবদান ছিলো। দেশের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনায় অগ্রণী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সঙ্গে কায়িক শ্রমের কাজেও লিপ্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপের তিনি নিন্দা করেন, এমনকি সক্রিয়ভাবে বাধাও দেন। স্ত্রী-শিক্ষার বিষয়েও তিনি ছিলেন সমান আগ্রহী। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও ভারতীয় বিজ্ঞান উৎকর্ষিণী সভার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো ।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় পরোক্ষভাবে তিনি রাজনীতিকদের সাহায্য করতেন। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ অক্টোবর আনন্দমোহন বসুর সভাপতিত্বে ফেডারেশন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সভায় তিনি ছিলেন প্রধান বক্তা। তার বক্তব্য রাজনীতিকদের প্রভূত সাহায্য করেছিলো। গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো –‘জ্ঞান ও কর্ম’, ‘শিক্ষা’, ‘এ ফিউ থটস অন্ এডুকেশন’, ‘দ্য এডুকেশন প্রবলেম ইন ইন্ডিয়া’ ইত্যাদি।
বৃটিশ সরকার ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে তাকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে ।

বাংলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বাংলা ভাষার চর্চা ও প্রসার ও উন্নতিকল্পে অক্লান্তকর্মা গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস - dainik shiksha সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন - dainik shiksha এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত - dainik shiksha ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব - dainik shiksha সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো - dainik shiksha শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048270225524902