গ্যাস সংকটের স্থায়ী সমাধান হোক

বিপ্লব বড়ুয়া |
জ্বালানি তেল ও গ্যাস শিল্প প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উপাদান। একটির সংকট দেখা দিলে শিল্প প্রতিষ্ঠানে স্থবিরতা নেমে আসে, উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের। এই ক’দিন দেশজুড়ে গ্যাসের যে চিত্র শুধু শিল্প প্রতিষ্ঠান নয় দেশের অধিকাংশ স্থানে রান্নার চুলাও জ¦লছে না। রান্না-বান্না হচ্ছে না। শুকনো খাবার খেয়ে দিন পাড় করতে হয়েছে অনেককে। এ অবস্থায় গ্রাহকরা চান গ্যাস সংটের স্থায়ী সমাধান।
 
দেশের বিভিন্ন দৈনিক প্রত্রিকা প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জে গ্যাস স্বল্পতায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান হচ্ছে দেশের অন্যতম চালিকা শক্তি এটিকে সচল রাখার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গ্যাসসহ অন্যান্য সেক্টর থেকে যেকোনো ধরনের দুর্নীতি চিরতরে নিমূর্ল করতে হবে।
 
সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদ থেকে অবসর নেয়া কর্মকর্তা অসীম বড়ুয়াকে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সকালে চা পরোটা সংগ্রহ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয়েছে। আর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ইনস্যুরেন্স কর্মকর্তা বিমল বড়ুয়া ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আরমান আহমেদ নানরুটি হাতে পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সৌভাগ্যবান মনে করছেন। গত ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে গ্যাস বিপর্যয়ের কারণে মারাত্মকভাবে ভুগতে হয়েছে মানুষদের। এমনকি খাবার না পেয়ে অনেক পরিবারকে অভুক্ত কাটাতে হয়েছে। আবার দুপুরে ভাত তরকারি কিনতে গিয়ে দোকানিদের উচ্চমূল্যের বিরম্বনায় নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে ক্রেতাদের। আবার এও দেখা গেছে টাকা দিয়েও ভাত তরকারি কিনতে না পেরে শুকনো খাবার--খই, মুড়ি, বিস্কুট, পাউরুটি--খেয়ে দিন পাড় করতে। কেউ কেউ কেরোসিন কেনার জন্যও হন্যে হয়ে ঘুরেছেন শত শত দোকানে। 
 
সীমাহীন উচ্চমূল্যে কেরোসিন সংগ্রহ করার পর স্টপ চুলায় রান্না করেছে, কেউ কেউ বাড়ির ছাদে ইট দিয়ে লাকড়ির চুলা বানিয়ে রান্না-বান্নার কাজ শেষ করেছে। গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে গিয়ে নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে। গ্যাসচালিত পরিবহনের সংখ্যাও ছিলো একবারে কম। গ্যাস কিনতে না পেরে প্রায় ৮০ শতাংশ গাড়ি দিনের পুরোসময় বন্ধ রাখতে হয়েছে। আর আল্প সংখ্যক যে গাড়িগুলো চলেছে ভাড়ার সংখ্যায় ছিলো দ্বিগুণ-তিনগুণ। বিগত অনেকদিন ধরে চট্টগ্রামে গ্যাস এই আসে এই যায় অবস্থায় থাকলেও ১৯ জানুয়ারির মতো গ্যাস বিপর্যয় আর কোনোদিন দেখেনি চট্টগ্রামবাসী। গত ২৪ ঘণ্টায় মানুষ যে কী পরিমাণ অস্বস্তিকর অবস্থায় দিন পাড় করেছেন একমাত্র ভুক্তভোগীরা ব্যতীত অন্যরা উপলব্ধি করতে পারবেন না। যদিও বা সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নসরুল হামিদ গ্যাসের ব্যাপারে কিছুটা দুঃসংবাদ দিলেও কিন্তু এই দুঃখটা যে এতো সহসা ঘনিয়ে আসবে কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। 
 
রাস্তা-ঘাট, দোকান-পাট, অলিগলি দিয়ে হাঁটার পথে দেখেছি দু’চার জন মিলিত হলেই যে কথাটা এখন হর হামেশা শোনা যাচ্ছে সেটি হল ‘কৃত্রিম সংকট’। চাল, ডাল, তেল, লবণ, পিয়াজ, শুকনো খাবার থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, সবজির বাজারও যখন সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায় তখন গ্যাসও যে একই পথের পথিক হবে না এ আস্থা রাখে কী করে। পুরো দেশটাকে যখন এই কৃত্রিমের কবলে পড়তে হয় তাহলে এই সংকট থেকে উদ্ধারে ভুমিকা দেখি না কেন? খাদ্যমন্ত্রী বললেন, যারা চালের দাম যেভাবে বাড়িয়েছেন, সেভাবেই তাদেরকে কমাতে হবে। কিন্তু কই, এর তো কোনোরকম বাস্তবায়ন দেখলাম না। বরঞ্চ আরো বাড়তে শুরু করেছে। তাহলে এই জাতীয় কথায় বোঝা যাচ্ছে বাংলার জনগণ এখন শুধুমাত্র আশাতেই থাকা ছাড়া এর থেকে বের হওয়ার পথ খোলা নেই। কথার পরও যখন কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না টিসিবি থেকে কার্ডধারীদের জন্য কিছুটা সুযোগ করে দিলো সরকার। কার্ড তো পেয়েছেন কিছু মানুষ, আবার তাদের ভাগ বসিয়েছে কিছু সুযোগ সন্ধানি প্রতারক চক্র। স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগসাজশে অকার্ডধারীদেরও চাল, ডাল, তেল নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আমাদের ব্যথিত করে। এরকম চিত্র চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় এলাকায় যেমন দেখেছি অন্যান্য স্থানেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আবার যারা পাওয়ার যোগ্য তারা পাচ্ছেন না।
 
মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকে আছে তারা কোনোভাবে হাত পাততে পারছেন না। তাদের পকেটে টাকা নেই। প্রয়োজনের তুলনায় অল্পস্বল্প খাদ্যপণ্য কিনে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে হচ্ছে। খাদ্যপণ্য বিতরণের ক্ষেত্রে যে ধরনের এখন বৈষম্য তৈরি হচ্ছে অনেকেই বলছেন এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। সবার জন্য খাদ্যপণ্য বিক্রির নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা আশু জরুরি। নতুন সরকারকে শিক্ষা ও খাদ্যপণ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর জন্য যতোটুকু চ্যালেঞ্জের প্রয়োজন হোক তার থেকে চুল পরিমাণও ছাড় দেয়া যাবে না। মানুষ এখন একটু স্বস্তিতে বাঁচতে চায়। দেশের অধিকাংশ মানুষ রাজনীতি বোঝেন না। তারা শুধু চান দু’বেলা দু’মুঠো ভাত আর শান্তিতে থাকার নিশ্চয়তা। 
 
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গ্যাসের নতুন যে রেট, তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা ভুগছেন। নতুন সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, সরকার ব্যবসাবান্ধব হবে। ব্যবসাবান্ধব সরকার ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধান করবে, এটাই প্রত্যাশা।
 
বাংলাদেশ নিটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যখন গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলো তখন কিন্তু বলা হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেয়া হবে। তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হলো ঠিকই কিন্তু গ্যাসের সমস্যার সমাধান হলো না।         
 
২০৪০ খ্রিষ্টাব্দে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের যে ভিশন সরকার গ্রহণ করেছে এই প্রত্যয়কে আমি ধন্যবাদ জানাই তবে তার আগে সরকারকে যেসব ধাপ অতিক্রম করতে হবে তার মধ্যে প্রথম অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। এই দুর্নীতির শেকড় উৎপাটন করা না গেলে দেশ অগ্রগামিতা থেকে পিছয়ে পড়বে। তাই স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষে সরকারি-বেসরকারিসহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের সামনে দুর্নীতি বিরোধী বিষয়ে সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান উজ্জল হয়েছে। বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশকে একটি উঁচুমাত্রায় তিনি নিয়ে যাবেন বলে জনগণের প্রত্যাশা।  
 
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে - dainik shiksha একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের - dainik shiksha ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম - dainik shiksha থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান - dainik shiksha প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0084159374237061