সম্প্রতি বেসরকারি স্কুল কলেজের গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও গ্রন্থাগার প্রভাষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএর) মধ্যেমে এ পদগুলোর নিয়োগ সুপারিশ করার নির্দেশনা গত ৩১ মে জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর, এসব পদে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীদের এমপিওভুক্তির সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে, এসব পদে প্রক্রিয়াধীন নিয়োগ আগের নিয়মে কমিটির মাধ্যমে শেষ করার দাবি জানিয়েছেন প্রার্থীরা। তাদের দাবি, নতুন আদেশের ফলে আদেশের আগে নিয়োগের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হলেও যেসব প্রার্থীর পরীক্ষা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ দীর্ঘসূত্রিতার জন্য প্রার্থীরা দায়ী নন।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
নিয়োগ প্রত্যাশী সাইফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘এ আদেশ জারির ফলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল কলেজ) জনবল কাঠমো ও এমপিও নীতিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী সহকারী গ্রন্থাগারিক ও গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ প্রত্যাশীরা ক্ষতিগ্রস্ত। যারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে ব্যাংক ড্রাফট-পোস্টাল অর্ডারসহ আবেদন করেছি ও নিয়োগ কার্যক্রমে প্রক্রিয়াধীন আছি, তারা চরম বঞ্চিত।’
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জারি হওয়া মাদরাসার এমপিও নীতিমালা ও ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর জারি হওয়া মাদরাসার সংশোধিত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে আমরা বিভিন্ন দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদরাসায় গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ব্যাংক ড্রাফট-পোস্টাল অর্ডারসহ আবেদন করেছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অজ্ঞাত কারণে মাদরাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ আছে। এ কারণে আমাদের আবেদন করা অনেক মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি ও গভানিংবডির নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়ও প্রায় শেষ হওয়ার পথে। আমরা ভুক্তভুগী। অথচ এর জন্য প্রার্থীরা দায়ী নন।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘চাকরির প্রত্যাশায় অনেক টাকা পয়সা খরচ করে নির্ধারিত বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতোকত্তরের পাশাপাশি আলাদাভাবে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা ও মাস্টার্স কোর্সে দেশের বিভিন্ন স্বীকৃত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ভর্তির পর থেকেই আমরা নানা কারণে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। পরীক্ষা কার্যক্রমে দীর্ঘ সময়, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘ অপেক্ষা ও সর্বশেষ করোনা মহামারির কারণে চাকরির প্রত্যাশায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও যথাসময়ে নিয়োগ পরীক্ষায় কার্যক্রম না হওয়াসহ নানা কারণে আমাদের অনেকেরই চাকরির বয়স অতিবাহিত হওয়ার পথে। সব দিক বিবেচনায় আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
তাই, ৩১ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা আদেশের আগে প্রক্রিয়াধীন থাকা সহকারী গ্রন্থাগারিক (সহকারী শিক্ষক গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) এবং গ্রন্থাগারিক (গ্রন্থাগার প্রভাষক) পদ দুটিতে আগের নিয়মে নিয়োগ সম্পাদন করার দাবি জানান সাইফুল। একইসাথে মাদরাসার সহকারী গ্রন্থাগারিক ও গ্রন্থাগারিক পদ দুটিতে নিয়োগে অতিদ্রুত মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়নের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সাইফুল বলেন, ‘শুধু প্রার্থী চূড়ান্ত নয়, প্রক্রিয়াধীন থাকা সবাইকে আগের নিয়মে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ দিয়ে ৩১ মে জারি করা আদেশে সংশোধন চাই।’
এর আগে গত ৩১ মে বেসরকারি স্কুল কলেজের গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও গ্রন্থাগার প্রভাষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দিয়ে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। আদেশে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুসারে ‘সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান)' (পূর্বের পদ 'সহকারী গ্রন্থাগারিক-ক্যাটালগার') এবং ‘গ্রন্থাগার প্রভাষক’ (পূর্বের পদ গ্রন্থাগারিক) নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষকের মত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও উত্তীর্ণদের সনদ দেয়াসহ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদার অনুকূলে নিয়োগ সুপারিশ করতে হবে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার অংশ হিসেবে এ দুটি পদে এনটিআরসিএ সিলেবাস প্রণয়নসহ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। তবে, এ আদেশ জারির আগে বিধিমোতাবেক যাদের নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্নসহ ফল প্রকাশ করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আগের নিয়মে এমপিওভূক্ত হতে পারবেন।
মন্ত্রণালয় আরও বলছে, এ আদেশ জারির পর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিংবডি বা অ্যাডহক কমিটি কর্তৃক এ পদগুলোতেনিয়োগ প্রদান করা যাবে না। এ আদেশ জারির পর এসব পদে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলে তা অবৈধ নিয়োগ বলে বিবেচিত হবে এবং তারা কোনোভাবেই এমপিওভুক্তির আওতায় আসবে না।
এর আগে গত ২৮ মার্চ জারি হওয়া বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালায় শিক্ষক মর্যাদা পেয়েছেন স্কুল ও কলেজে কর্মরত গ্রন্থাগারিক এবং সহকারী গ্রন্থাগারিক ও ক্যাটালগাররা। বেসরকারি স্কুল ও কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে গ্রন্থাগারিকদের পদের নতুন নাম ‘গ্রন্থাগার প্রভাষক’ এবং সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যটালগারদের পদের নতুন নাম 'সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান)' করা হয়েছে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।