গ্রেফতার বুয়েট শিক্ষার্থীরা নির্দোষ, দাবি পরিবারের

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে গিয়ে গ্রেফতার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা। তাদের ভাষ্য, তাদের সন্তানেরা নিরপরাধ। তাঁদের সন্তানেরা কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

মঙ্গলবার বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা এই দাবি জানান। 

গত রোববার বিকেলে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে আটক করে তাহিরপুর থানার পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে তাদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা দায়েরের পর তাদের গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, তারা ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়ানোর আড়ালে গোপন বৈঠক ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে এসেছিলেন। জননিরাপত্তা বিঘ্নিত ও মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ ছিলো তাঁদের।

পুলিশের তথ্যমতে, গ্রেফতার ৩৪ জনের মধ্যে ২৪ জন্য বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছয়জন প্রথম বর্ষ, ছয়জন দ্বিতীয় বর্ষ, পাঁচজন তৃতীয় বর্ষ, পাঁচজন চতুর্থ বর্ষ ও দুজন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন। বাকি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন বুয়েটের সদ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী। অন্য তিনজনের মধ্যে দুজন এবার এসএসসি পাস করেছে, একজন বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বাসায় কাজ করেন।

গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বুয়েটের ছাত্র আলী আম্মার মৌয়াজের ভাই আলী আহসান জুনায়েদ। তিনি বলেন, গত ২৯ জুলাই এই শিক্ষার্থীরা সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। দীর্ঘক্ষণ তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিলো না। প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকেই তারা নিজের ও অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জানাতে বলে। তারা জানায়, হাওরে নৌকাভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ তাদের আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে এসেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপর পরিচয়পত্রের নম্বর দেয়ার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে। তারা ফোনে শুধু এটুকুই বলতে পেরেছে। তাদের ফোন নিয়ে নেয়া হয়। স্থানীয় পুলিশ সুপার ও ওসির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা পারা যায়নি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অনেক উদ্বেগের পরে সোমবার বিকেলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে আমরা জানতে পারি, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে! এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হই। আমরা মনে করি, এ রকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। স্থানীয় এসপি ও ওসিকে ফোন দেয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে বুয়েটের উপাচার্যকেও ফোন করেছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারও সঙ্গেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি। মঙ্গলবার বিকেলে আমাদের হাতে পৌঁছানো মামলার বিবরণীতে দেখা গেছে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রদ্রোহের কর্মকাণ্ডসহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টি আমাদের প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র। কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ংকর মামলা সাজানো হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অভিভাবকেরা। সন্তানদের দ্রুত জামিন দেয়া ও মামলা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সুনামগঞ্জ থেকে গ্রেফতার বুয়েট ছাত্র এ টি এম আবরার মুহতাদীর মা ওয়াহিদা নাসরিন, হাইছাম বিন মাহবুবের মা ফাতেমা বেগম, আফিফ আনোয়ারের বাবা আনোয়ারুল হক, সাকিব শাহরিয়ারের বাবা জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বাকি বিল্লাহর ভাই আরিফ বিল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা সবাই নিজেদের সন্তান ও স্বজনদের নিরপরাধ বলে দাবি করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন - dainik shiksha এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান বন্যায় ১২শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি - dainik shiksha বন্যায় ১২শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ - dainik shiksha কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো - dainik shiksha শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে - dainik shiksha শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055010318756104