ঘাতকদের হাত একটুও কাঁপলো না!

সিলেট প্রতিনিধি |

দুরন্ত সোহাগ। ১৩ বছরের শিশু। খেলাধুলা, হাসিখুশিতে মেতে থাকতো সবসময়। মাতিয়ে রাখতো সবাইকে। পিতা-মাতার আদরের ধন। তাই আদর করে নামও রেখেছিল সোহাগ। সেই সোহাগকেই নির্মমভাবে হত্যা করেছে ঘাতকরা। সোহাগের গলা, চোয়াল, কপাল সবখানেই ধারালো অস্ত্রের আঘাত। মাথাসহ বুকের উপরের অংশে ৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে তার। এমন নির্মমতায় শোকাহত জগন্নাথপুর গ্রামের আশারকান্দি ইউনিয়নের জয়দা গ্রাম। পিতা-তৈয়বুর রহমান টিটু ও মা নার্গিস বেগম ছেলের শোকে কেঁদে কেঁদে কাতর। সোহাগের পুরো নাম মাহফুজুর রহমান সোহাগ। সে জয়দা দাখিল মাদরাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় সে। পড়ালেখায়ও মেধাবী ছিল। ৬ দিন আগে গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হয় সোহাগ। এলাকার এক সহপাঠী সোহাগকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে সে বাড়ি ফিরেনি।

সারা রাতই সোহাগের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয় বিভিন্ন স্থানে। গ্রামের লোকজনও দলে দলে সোহাগের খোঁজে বের হন। কিন্তু পাননি। পরদিন সকাল ৯টায় স্থানীয় চেরাগ আলীর জমিন থেকে তার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ প্রথমেই লাশের আলামত দেখে নিশ্চিত হয় সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথায় ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ১৫ই ফেব্রুয়ারি নিহত সোহাগের বাবা জগন্নাথপুর থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রেপ্তার করে একই এলাকার নাজমুল ও রাজুকে। তাদের জবানবন্দি অনুযায়ী উদ্ধার করা হয় ধারালো সেই দা, যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সোহাগকে। নিহত সোহাগের বাবা তৈয়বুর রহমান টিটু মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও গ্রামে তার সঙ্গে কারো বিরোধ নেই। খুনিরা কী কারণে সোহাগকে হত্যা করেছে- সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সোহাগের বাবা তৈয়বুর রহমান টিটু এবং মা নার্গিস বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার আদরের ধন সোহাগকে এনে দাও।

তাকে আমরা অফিসার বানাবো। সে দেশের সেবক হবে। তাকে এনে দাও।’ মা নার্গিস বেগম জানান, সোহাগ জন্মের পর বুঝে ওঠা থেকে শুরু করে মাদরাসায় লেখাপড়ারত অবস্থায় কারো সঙ্গে কোনো দিন ঝগড়া কিংবা অন্যের অনিষ্ট করেনি। মেধাবী ছাত্র হিসেবে মাদরাসায় ছিল তার ব্যাপক সুনাম। সে প্রতিটি ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিতো। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর পার্শ্ববর্তী বাড়ির নজমুল তাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। প্রতিদিনের মতো ধারণা করা হয় সোহাগকে সে ওয়াজ মাহফিলে নিয়ে গেছে। রাত গভীর হলেও সোহাগ বাড়ি ফেরেনি। রাতেই সোহাগের বাবা যান নজমুলের বাড়িতে। অনেক ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। ওই রাতে সোহাগের বাবা বাড়ি ফিরলেও নির্ঘুম ছিলেন তিনি ও স্ত্রী নার্গিস। সকালে ছেলের লাশ দেখতে হবে তাও কল্পনা করেননি নার্গিস। জগন্নাথপুর থানার ওসি মো. মোরসালিন জানান, এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পরিবার যাতে ন্যায়বিচার পায় সে দিকে দৃষ্টি রেখেই তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, আসামিদের রিমান্ডে আনতে আবেদন করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার এসআই মো. আনুয়ার হোসেন জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। প্রাথমিক তদন্তে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জবানবন্দিতেই দা উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার ৮০ ভাগ রহস্য উদঘাটন হয়েছে। শিগগিরই হত্যার কারণ বেরিয়ে আসবে। এদিকে, সোহাগ হত্যার ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যার রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন এলাকাবাসী ও তার পরিবার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023989677429199