দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ঢাকার ধামরাইয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল সরবরাহ করার শর্তে এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখেই দৌড়ে পালান ওই কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার নাম মো. ফেরদৌস রহমান। তিনি ধামরাই উপজেলার যাদবপুর বিএম স্কুল এন্ড কলেজের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে ওই ঘুষখোর কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজওয়ার আকরাম সাকাফি ইবনে সাজ্জাদ।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ধামরাই উপজেলা পরিষদ চত্বরে। মুলাবর্তি ব্যাগে টাকা নেওয়ার সময় জনতার উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের ক্যামেরাবন্দি হন ফেরদৌস রহমান নামে ঘুষখোর ওই কর্মকর্তা। ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ শিক্ষা বছরে এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার যাদবপুর বি এম স্কুল এন্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছিলেন ধামরাই পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ফেরদৌস রহমান। ওই পরীক্ষায় মোহাম্মদ আহমেদুল ইসলাম লিখন ও সোহান নামে দুই পরীক্ষার্থীর সিঙ্ক প্যাসেসে থাকায় কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করেই ওই দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন তিনি।
এরপর ২০২৩ শিক্ষা বছরে এসএসসি পরীক্ষায় ওই কর্মকর্তা বহিষ্কারের ভয় দেখিয়ে তাহমিদুল ইসলাম লিখনের মা লিপি আক্তারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন। ২০২৪ শিক্ষা বছরে এসএসসি পরীক্ষায় বহিষ্কার না করা এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল সরবরাহ করার আশ্বাসে ওই লিপি আক্তারের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা ঘুস গ্রহণ করেন ফেরদৌস রহমান নামের ওই কর্মকর্ত।
কিন্তু বিধিবাম; বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিশ্রামাগারের সামনে ওই উৎকোচের টাকা গ্রহণ করার উপস্থিত জনতার সম্মুখে সাংবাদিকদের ক্যামেরাবন্দি হন ওই কর্মকর্তা। সাংবাদিকদের প্রশ্নবান ও ক্যামেরা এড়াতে দৌড়ে পালান তিনি। ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
বিষয়টি ধামরাই উজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাজওয়ার আকরাম সাকাপি সাজ্জাদকে অবহিত করা হলে তিনি ওই কর্মকর্তাকে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী তাহমিদুল ইসলাম লিখনের মা বলেন, ওই কর্মকর্তা আমার ছেলেসহ দুইজনের ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। আমার ছেলেকে বহিষ্কার করার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে নগদ এক লাখ টাকা। এবারও আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুস নেওয়ার সময় উপস্থিত জনতা ও সাংবাদিকদের সামনে ধরা পড়েছে সে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি ওই ঘুসখোর কর্মকর্তাকে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফেরদৌস রহমান বলেন, বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে। এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি জীবনে এমন কাজ আর কখনো করব না।
এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমি অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই কর্মকর্তাকে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। বাকি বিষয় বিভাগ বা দপ্তর দেখবে। এছাড়া কেউ যদি আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে আমি এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।