ঘুষের টাকা শিক্ষককে ফেরত দিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ নেয়া ১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে ক্ষমা চাইলেন শিক্ষা কর্মকর্তা। শিক্ষক নেতাদের কাছেও ক্ষমা চেয়ে এবারের মতো মাফ করে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। তবে এমন ক্ষমা তিনি আগেও একাধিকবার চেয়েছেন। বেশ কয়েকবার তার ঘুষ নেয়ার খবরও প্রকাশ হয়েছে। তিনি ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করেন না। হোক সেটা পেনশন, বদলি বা ছুটির কাজ। এছাড়া সংস্কারের জন্য টাকা বরাদ্দ পাওয়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা নেন।

ওই শিক্ষা কর্মকর্তার নাম এস. এম.মিজানুর রহমান। তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত। তিনি গত ২২ ফেব্রুয়ারি এ উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় তার উৎকোচ বাণিজ্য। এর আগে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাটের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শিক্ষকরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, ঈদুল আজহার ছুটির পর গত রোববার স্কুল খুলে। ওইদিন সকালেই শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মুঠোফোনে সংস্কার কাজের চেক নিতে ডেকে পাঠান উপজেলার জালোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাজেরা খাতুনকে। হাজেরা খাতুন স্কুলে অনেক কাজ আছে জানিয়ে পরের দিন আসতে চাইলেও তিনি ওইদিনই আসার জন্য চাপ দেন। পরে প্রধান শিক্ষক অফিসে এসে অফিস সহকারীর কাছ থেকে বরাদ্দ চেক নিয়ে ব্যাংক থেকে নগদায়ন করে ফিরে যান। সন্ধ্যায় শিক্ষা কর্মকর্তা পুনরায় ফোন দিয়ে তার সঙ্গে দেখা না করে চলে যাওয়ার বিষয়ে কৈফিয়ত চান। সময় স্বল্পতার কথা জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলে শিক্ষা কর্মকর্তা জানান সোমবার তিনি স্কুল ভিজিটে যাবেন। এসময় তাকে ১০ হাজার টাকা রেডি রাখতে বলেন। পরের দিন শিক্ষা কর্তা গেলে সাদা খামে করে হাজেরা খাতুন ওই টাকা দেন। একই সঙ্গে অন্য শিক্ষককে দিয়ে কৌশলে ভিডিও করে রাখেন। যার অডিও ও ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে আছে।

পরে স্কুল থেকে শিক্ষা কর্মকর্তা চলে গেলে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু শামা ও সাধারণ সম্পাদক আজমা খাতুনকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান ওই শিক্ষক। এরপর মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন আবু শামা ও আজমা খাতুন। একই সঙ্গে ঘুষ বাবদ নেয়া টাকা ফেরত দিতে বলেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তিনি টাকা ফেরত দেন হাজেরা খাতুনকে। একইসঙ্গে আর কখনো এমনটা হবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেন।

শিক্ষক নেত্রী আজমা খাতুন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এই অফিসার এসেই ঘুষ বাণিজ্য শুরু করেছেন। আমার কাছ থেকেও দুই হাজার টাকা চেয়েছিলেন। প্রতিবাদ করায় আর নেয়নি। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল থেকে প্রতিনিয়ত কাজ ঠেকিয়ে, হুমকি দিয়ে ঘুষ নিচ্ছেন। নিজ দপ্তরের কর্তা তাই প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না অনেক শিক্ষক। কিন্তু এ উপজেলায় এ ধরণের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কখনো আসেনি। এর আগে উৎকোচ নেয়াকে কেন্দ্র করে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তার কোনো বোধ হয়নি। আর ছয় মাস থাকলে বড়াইগ্রামের প্রাথমিক শিক্ষা ধ্বংস হয়ে যাবে।

শিক্ষক নেতা আবু শামা বলেন, কয়টা অভিযোগের কথা বলবো প্রতিনিয়তই অভিযোগ পাচ্ছি। ধরতে গেলে সব স্কুল থেকেই অভিযোগ পাওয়া যাবে। তিনি একজন কর্মকর্তা মানুষ ক্ষমা চেয়েছেন। আমাদেরও বস হন কি বলবো।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এখানের পরিবেশ খুব খারাপ। এই পরিবেশে চাকরি করা যায় না। আপনি যা শুনেছেন তা এমন কিছু না। এ ধরনের কাজ হয়ই। আপনার সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানাবো বলে ফোন রেখে দেন তিনি। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় বাকী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ একসঙ্গে : শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha বাকী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ একসঙ্গে : শিক্ষা উপদেষ্টা মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি - dainik shiksha মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী - dainik shiksha শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002938985824585