চট্টগ্রাম কলেজে দাঁড়াতে পারছে না ছাত্রদল

দৈনিক শিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম |

চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় প্রথম যে তিনজনের মৃত্যু হয়, তাদের একজন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। আর সেই কলেজেই দফায়-দফায় হামলার শিকার হচ্ছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা মিলছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সূত্র জানায়, ২ সেপ্টেম্বর হামলার শিকার হন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক খোরশেদুল আলম ও ছাত্রদল নেতা সাকিল আহমেদ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই দিন তারা ক্যাম্পাসে কথা বলছিলেন। এমন সময় কয়েকজন এসে তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। মোবাইল ঘেঁটে তারা ছাত্রদলের নেতাদের শনাক্ত হওয়ায় তাদের কলেজের একটি কক্ষে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়।

এ ঘটনায় ৩ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর ওয়াসিম আকরামের নামে কলেজের একটি ভবন নামকরণের প্রস্তাব নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন ছাত্রদল কর্মীরা। এ নিয়ে কথা বলার সময় অধ্যক্ষের রুমে শিবির কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর জের ধরেই বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন নেতারা। বৃহস্পতিবার মারধরের শিকার চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আশরাফ হোসেনও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, সহপাঠীদের নিয়ে অধ্যক্ষের কার্যালয় ভবনের সামনে গেলে তার ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। হামলাকারীরা তাকে কলেজ ক্যাম্পাসে গেলে জানে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে। 

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাফরাশ নূরী সিজ্জি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদল। চট্টগ্রামে প্রথম শহিদ হওয়া ওয়াসিম আকরামও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। অথচ সেই কলেজেই শিবিরের হাতে দফায় দফায় হামলার শিকার হতে হচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর হতে পারে না। তারা কলেজে ঢুকতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখে ছাত্রদল কি না। যাচাই করার পর ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। তা না হলে তারা কলেজেও ঢুকতে দিচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। তাদের হামলা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বাদ যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ দখলে নেয় শিবির। তারা (শিবির) বলছে, চট্টগ্রাম কলেজে শিবির ছাড়া অন্য কোনো দলের নেতাকর্মী থাকতে পারবে না। তবে কলেজে শিবিরের কোনো কমিটি না থাকায় তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। পরিচয় আড়াল করার জন্য তারা সবসময় মাস্ক ব্যবহার করছে। এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারছে না।

এদিকে চট্টগ্রাম কলেজে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই জানিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি তানজির হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, চট্টগ্রাম কলেজে সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘটিত কোনো ঘটনার সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবির জড়িত ছিল না। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে শিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কলেজে প্রকাশ্যে কোনো দলেরই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। তবে শিক্ষার্থীরা জানে কে কোন দল করে। এ নিয়ে শুক্রবার রাত ৯টায় শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং আহ্বান করা হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম কলেজ শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরামের প্রতি সবার শ্রদ্ধা রয়েছে। তার জন্য কী করা যায় আমরা চিন্তা করছি। এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই।

১৬ জুলাই নগরীর মুরাদপুর এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আহত হন। এর মধ্যে ওয়াসিম আকরাম, ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। নিহত ওয়াসিম আকরাম নগরীর চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এবং ফয়সাল আহমেদ শান্ত নগরীর ওমর গণি এমইএস কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ফারুক ছিলেন ফার্নিসার দোকানের কর্মচারী। ওয়াসিমের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায়। তিনি বহদ্দারহাট এলাকায় থাকতেন। তার বাবা শফি আলম একজন সৌদি প্রবাসী।

আহত কর্মীদের দেখতে গিয়ে ডা. শাহাদাত-ছাত্রলীগের মতো পরিবেশ নষ্ট করছে শিবির : চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম কলেজে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যেভাবে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে ঠিক সেভাবে ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ বিনষ্টের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ দিলেই তাদের ওপর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেতাকর্মীদের দেখতে গেলে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যমুক্ত করতে হবে। আমরা বিগত ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ড্যাব চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ডা. তমিজ উদ্দিন মানিক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. সারওয়ার আলম, বিএনপি নেতা জসিম উদ্দীন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সালাহউদ্দীন সাহেদ, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আমজাদ হোসেন শাকিল, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাফরাশ নূরী সিজ্জি প্রমুখ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আবেদনের যোগ্যতা নেই তবু শিক্ষক - dainik shiksha আবেদনের যোগ্যতা নেই তবু শিক্ষক শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে - dainik shiksha শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে হা*তুড়ি পেটা - dainik shiksha কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে হা*তুড়ি পেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএমজিএসে মাস্টার্স করার সুযোগ - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএমজিএসে মাস্টার্স করার সুযোগ সাত কলেজে চূড়ান্ত ধাপের বিষয় বরাদ্দ ৩ অক্টোবর - dainik shiksha সাত কলেজে চূড়ান্ত ধাপের বিষয় বরাদ্দ ৩ অক্টোবর প্রধান শিক্ষককে তাড়িয়ে চেয়ারে বসলো ছাত্র! - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে তাড়িয়ে চেয়ারে বসলো ছাত্র! সেন্ট যোসেফে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি আবেদন শুরু - dainik shiksha সেন্ট যোসেফে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি আবেদন শুরু দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043971538543701