দৈনিক শিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম : অর্ধেক শিক্ষক দিয়ে চলছে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কার্যক্রম। যুগের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার দাবি রাখলেও পাঠদানের ভবনগুলো পুরোনো ও জরাজীর্ণ। ল্যাবের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের আধুনিক ভবন নেই। ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেলের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। লাইব্রেরিতে নেই গবেষণার জন্য বিদেশি জার্নাল। প্রশাসনিক ভবন ও ল্যাবগুলোর দেওয়ালে জন্মেছে শেওলা। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। চাহিদার তুলনায় প্রজেক্টর কম। ক্লাসরুমে ফ্যান আছে তো সুইচ নেই। আবার কোনো কক্ষে সুইচ থাকলেও লাইট-ফ্যান নষ্ট। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে পেরি প্যাটেটিক বুনন স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে পেরি প্যাটেটিক বুনন স্কুলে টেক্সটাইল প্রযুক্তিতে দুই বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা হয়। তখন একে বিভাগীয় টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট বলা হতো। সময়ের চাহিদার তাগিদে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এই ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে থেকে একে চার বছর মেয়াদি করা হয়। টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের উচ্চ চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০০৬-২০০৭ সেশনে টেক্সটাইল ডিপ্লোমা কোর্স বাতিল করে সরকার একে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নিয়ে টেক্সটাইল প্রকৌশলে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করে। দেশের আটটি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে পড়াশোনায় এই প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই সেরা। ১৫ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কলেজটিকে যুগের চাহিদা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিও দীর্ঘদিনের।
কলেজের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুর দিকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর একটি ডিপার্টমেন্ট ছিল। বর্তমানে চারটি বিভাগে প্রায় ৫৫০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। বিভাগগুলোতে জনবলের তুলনায় কাজের চাপ প্রায় আট গুণ। শিক্ষক ঘাটতির কারণে অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে।
শাকিল, জুবায়েরসহ কয়েক জন শিক্ষার্থী জানায়, শহর থেকে দূরে হওয়ায় অতিথি শিক্ষকরা ক্লাসের সময়সূচি নির্ধারণ করে থাকেন তাদের সুবিধামতো। এতে ক্লাসের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। কলেজে গ্যাস-সংযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন সময়োপযোগী পাঠ থেকে। খেলার মাঠ সারা বছরই পানিতে নিমজ্জিত থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ পান না। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য নেই কোনো যানবাহন।
কয়েক জন শিক্ষক জানান, এই কলেজে শিক্ষক এবং স্টাফ কোয়ার্টার সংকট রয়েছে। নিয়োগবিধির জটিলতার কারণে সময়মতো পদোন্নতি না হওয়ায় শূন্য পদগুলো পূরণ করা হচ্ছে না। প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবন সংকট রয়েছে। চারপাশে বাউন্ডারি ওয়ালগুলোর নাজুক অবস্থা। কলেজের নিজস্ব যানবাহন না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রশাসনিক কাজে।
চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার মো. আলী আজম রোকন বলেন, কারিগরি সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টগুলোতে ৭০ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বলা যেতে পারে, সৃষ্ট পদের ৫০ শতাংশ শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। তবে, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখভাল করে। তিনি জানান, এডিবির অর্থায়নে প্রায় ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্মার্ট টেক্সটাইল টেস্টিং লিভিং ল্যাব হতে যাচ্ছে এ কলেজে। এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম। শিগিগরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তখন অনেক সমস্যা কেটে যাবে।