রেলওয়ের জমি অবৈধ দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিরুদ্ধে। দখলকৃত জমিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য কাঁচাবাজারও তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চবি রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন প্রায় এক একর জমি দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের কারণে সেখানে রেল চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেল চলাচলে ঝুঁকি এড়াতে রেলপথের উভয় পাশে ন্যূনতম ৫০ ফুট পর্যন্ত ভূমিতে কোনো ধরনের স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা যায় না। ব্রিটিশ আমল থেকে রেলওয়ে আইনে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু চবি প্রশাসন কয়েক বছর ধরে রেললাইন সংলগ্ন জায়গায় ৮-১০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরের অংশে রেললাইন থেকে ২০০ ফুট পর্যন্ত জমি রেলওয়ের অধিগ্রহণে থাকলেও চবি কর্তৃপক্ষ সেখানে ১৪৬ ফুট পর্যন্ত এলাকায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছে। যদিও ওই প্রাচীরের পরও রেলের পাঁচটি আবাসিক কোয়ার্টার রয়েছে। মূলত চবি এলাকার বসবাসকারীদের জন্য কাঁচাবাজার নির্মাণ করতে রেলের জমিতে সীমানাপ্রাচীর দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ।
জানা গেছে, চবি রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম এলাকায় ৫ দশমিক ৯৬ শতক ও অন্য পাশে প্রায় ৯০ শতক মিলিয়ে মোট প্রায় এক একর জমি সীমানাপ্রাচীর ও দোকানের নামে অবৈধভাবে দখল করেছে চবি কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি স্বীকার করলেও চবির ভূ-সম্পত্তি বিভাগ বলছে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলে থাকা জমিগুলো উদ্ধার করলে চবির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। তবে রেলওয়ের পক্ষ থেকে একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও প্রাচীর নির্মাণ বন্ধ করেনি চবি কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, রেলের নিরাপত্তার স্বার্থে স্টেশন এলাকায় নির্ধারিত ভূমিগুলো প্রয়োজন। একটি উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা এরই মধ্যে সরেজমিন গিয়ে প্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রেলের মাঠপর্যায়ের আমিন ও সার্ভেয়াররা গিয়ে ওই প্রাচীর নির্মাণকাজ চলতে দেখেছেন বলে জানতে পেরেছি। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এ ধরনের অন্যায্য কর্মকাণ্ড আশা করা যায় না।
রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন দক্ষিণ পট্টি মৌজায় (দাগ নং-১১৭৭) রেলওয়ে ও চবি উভয় প্রতিষ্ঠানের জমি রয়েছে। স্টেশন এলাকার উত্তর পাশে ৫০ ফুট ও দক্ষিণ পাশে ২০০ ফুট জমি রেলওয়ে ১৯৭৯-৮০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এলএ কেস নং-৫০/৭৯-৮০ মূলে অধিগ্রহণ করে। ওই জমিতে অবৈধ ইজারা ও কাঁচাবাজার তৈরিতে বাধা দেয়ার পর চবির পক্ষ থেকে বিএস মূলে মালিকানা রয়েছে বলে দাবি করা হয়। যদিও গত এক মাসে চবি প্রশাসন তাদের মালিকানার সপক্ষে কোনো দলিলপত্র রেলওয়েকে জমা দিতে পারেনি।
অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি শাখার প্রশাসক অধ্যাপক মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, রেলের জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকান বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে রেলের জমিগুলো অরক্ষিত থাকায় উভয় প্রতিষ্ঠানের জমির সীমানা নির্ধারণ জটিল হয়ে পড়েছে। চবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেলওয়েকে স্টেশন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু চিঠি দেয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও রেলওয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
চবি প্রশাসনের বক্তব্যের বিষয়ে রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, চবি কর্তৃপক্ষ স্টেশন এলাকায় দোকান বরাদ্দ করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রেজিস্টার্ড দলিলে চুক্তিনামা করেছে। এসব চুক্তির নথি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে রেলওয়ে। এছাড়া স্টেশন এলাকায় রেলের ভূমির সীমানা ন্যূনতম ৫০ ফুট নির্ধারিত থাকে। ফলে নতুন করে সীমানা নির্ধারণের প্রয়োজন নেই।