চবিতে চাঁদা না পেয়ে ‘পরিকল্পিত’ ভাঙচুর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উপাচার্য ও পরিবহন দপ্তর থেকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে ‘পুঁজি’ করা হয়েছে শাটল ট্রেন দুর্ঘটনাকে। গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা দুটি মামলার এজাহারে তা উল্লেখ করা হয়। মামলায় ভাঙচুর, চাঁদা দাবি, হত্যার চেষ্টা ও চুরির অভিযোগ আনা হয়। 

দুটি মামলায় ৭ জন করে ১৪ জনকে চিহ্নিত করে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। আসামি মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। বাকিরা কর্মী। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তিন উপপক্ষ—সিএফসি, সিক্সটি নাইন ও বিজয়ের সঙ্গে যুক্ত। অন্য দুজনের মধ্যে একজন নিজেকে সাধারণ শিক্ষার্থী দাবি করেছেন। অপরজনের দলীয় পরিচয় জানা যায়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনার বিভিন্ন ফুটেজ, ভিডিও ও ঘটনাস্থল বিশ্লেষণ করে যাঁদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। 

পুলিশ বলছে, হামলার ঘটনা পরিকল্পিত ছিল। নইলে এত অল্প সময়ে এভাবে ভাঙচুর করা সম্ভব নয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে যাওয়ার সময় হেলে পড়া গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী এখনো চিকিৎসাধীন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত ১২টার দিকে ৬৫টি যানবাহন, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব এবং পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এই ভাঙচুরে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি উপপক্ষে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী এবং আরেকটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষ আবার ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত। 

ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠা উপপক্ষ সিক্সটি নাইনের নেতৃত্ব দেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সিএফসির নেতৃত্ব দেন সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ এবং বিজয়ের নেতৃত্ব দেন যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস। 

উপাচার্যের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আবদুর রাজ্জাকের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতারের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তাঁরা ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে এসে তাঁকে খুঁজতে থাকেন। না পেয়ে উপাচার্যের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মেহেদী হাসানকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়নকাজ থেকে উপাচার্যকে তাঁদের ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা না দিলে যেকোনো সময় উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেবেন। 

এরই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের ছাদের সঙ্গে গাছের ডালের ধাক্কা লাগলে কয়েকজন ছাত্রের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হয়। এ সময় এজাহারে উল্লেখ করা সাত আসামিসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ থেকে ৬০০ জন উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী রামদা, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল, লোহার রড, হকিস্টিক নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালান। তাঁরা সেখানে ভাঙচুর চালিয়ে প্রায় ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি করেন।

এই মামলার সাত আসামির মধ্যে ছয়জনই ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের নেতা-কর্মী। এর মধ্যে তিনজন শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ সিএফসি ও তিনজন সিক্সটি নাইনের সঙ্গে যুক্ত। বাকি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন।

সিএফসির তিনজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শাকিল হোসেন, সংস্কৃত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দীপন বণিক ও ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নূর মোহাম্মদ। 

অন্যদিকে সিক্সটি নাইনের তিনজন হলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের রিয়াদ হোসেন এবং ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সৌরভ ভূঁইয়া।

আর পালি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আমিনুল ইসলাম নিজেকে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি চট্টগ্রাম শহরে থাকেন। ঘটনার দিন ক্যাম্পাসে ছিলেন না। 

পরিবহন দপ্তর থেকে দাবি পাঁচ লাখ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ করা আরেক মামলার এজাহারে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের কাছে ৫ সেপ্টেম্বর সাত আসামি পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার জন্য আসেন। না দিলে ভাঙচুর চালানোর হুমকি দেন। শাটল ট্রেনের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরে তালা দিয়ে ২৩টি বাস ভাঙচুরসহ ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেন। 

এই মামলার সাতজনের মধ্যে ছয়জনই ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের কর্মী। এতে সিক্সটি নাইনের তিনজন, সভাপতি রেজাউল হকের অনুসারী একজন, সিএফসির একজন এবং বিজয় উপপক্ষের একজন রয়েছেন। বাকি একজনের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সিক্সটি নাইনের তিনজন হলেন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আনিছুর রহমান, একই বর্ষের ইতিহাস বিভাগের নাসির উদ্দীন মো. সিফাত উল্লাহ এবং বাংলা বিভাগের অনিরুদ্ধ বিশ্বাস। সিএফসির একজন হলেন বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মো. আজিমুজ্জামান। বিজয়ের একজন হলেন সংস্কৃত বিভাগের স্নাতকোত্তরের অনিক দাশ। সভাপতির অনুসারী পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের ইমরান নাজির। দলীয় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি সাজ্জাদ হোসেনের। তিনি দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। 

‘যৌক্তিক আন্দোলন’ বললেন নেতারা

জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘যাঁরা ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আপত্তি নেই। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে থাকার কারণে যদি কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়, তাহলে আমাদের বলার আছে। আমরা এর প্রতিবাদ করব।’ 

একই কথা বলেন মির্জা খবির সাদাফও। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকার কারণে যেন কাউকে অহেতুক মামলা না দেওয়া হয়। এমনটি হলে তাঁরাও প্রতিবাদ করবেন। চাঁদা দাবির অভিযোগ দুজনেই অস্বীকার করেন।

গুরুত্বসহকারে মামলা দুটির তদন্ত চলছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফি উল্লাহ। গতকাল রোববার রাতে তিনি বলেন, চাঁদা না পেয়ে পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নেপথ্যের ইন্ধনদাতাদেরও খুঁজে বের করা হবে। অপরাধী যে-ই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না।

সূত্র : প্রথম আলো


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি - dainik shiksha মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর - dainik shiksha গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী - dainik shiksha শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত - dainik shiksha সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029251575469971