খাবার হোটেলে গায়ে ডাল পড়া নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২১ জন।
শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। পরে বিকেলে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে জড়ানো ছাত্রলীগের গ্রুপ দুটি হলো- শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী ‘বিজয়’ এবং সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ‘সিক্সটি নাইন’।
জানা যায়, শুক্রবার শাহ আমানত হল সংলগ্ন একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে যান সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মী ও পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আজমির হোসেন ও বিজয় গ্রুপের কর্মী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরী। মাহির যে টেবিলে বসে খাচ্ছিলেন, সে টেবিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আজমিরের খাবারের প্লেট থেকে মাহিরের গায়ে ডাল পড়ে। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর তা হাতাহাতিতে রুপ নেয়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীরা শাহজালাল হল থেকে লাঠিসোঁটা, রামদা, রড ও ইটপাটকেল নিয়ে বের হয়। আর বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হল থেকে একই ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বের হয়। সোহরাওয়ার্দী হলের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানতে চাইলে আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরী বলেন, ‘আমার শরীরে আজমির ইচ্ছাকৃতভাবে ডাল ফেলেছে। আমি এর প্রতিবাদ করায় অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে সে। এ কারণে আমি প্রতিহত করেছি।’
আজমির হোসেন বলেন, ‘খুব সামান্য ঘটনায় মাহির রেগে গিয়েছিল। এরপর মাহির অকথ্য ভাষায় গালাগাল করলে আমি এর প্রতিবাদ করি। এরপর আমাদের কিছুটা হাতাহাতি হয়।’
বিজয় গ্রুপের নেতা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীরা ইচ্ছে করে ঝামেলায় জড়িয়েছে। আমরা প্রতিহত করেছি। এখন সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
তবে পাল্টা অভিযোগ দিয়ে সিক্সটি নাইনের নেতা ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘তারাই আগে লাঠিসোঁটা নিয়ে হল থেকে বের হয়েছে। পরে আমরা প্রতিহত করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘খাবার হোটেলে তর্কাতর্কি থেকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। বিচ্ছিন্নভাবে দুই একজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে ২১ জনের কোনো তথ্য আমরা পাইনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’
এদিকে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ২১ জন আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে সেবা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। তিনি বলেন, ‘প্রায় ২১ জনের মতো শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের শরীরে পাথর নিক্ষেপ, লাঠিসোঁটার আঘাতের চিহ্ন ছিল। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে৷ গুরুতর আহত কেউ নেই।’