চবিতে বার্ষিক বিবরণী নেই ২০ বছর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ বছর ধরে বার্ষিক বিবরণী প্রকাশিত হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রতিবছরই এই বিবরণী প্রকাশ করতে হবে। তা না করে অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য থেকে শুরু করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেউ-ই জানেন না কেন বের হয় না এই বিবরণী। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সুজয় চৌধুরী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক বিবরণী প্রকাশিত হয় ১৯৯৮-৯৯ খ্রিষ্টাব্দে। নিয়ম থাকলেও এই বিবরণী প্রকাশের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তথ্য গোপন করতে এই বই প্রকাশ করছে না কর্তৃপক্ষ। কেননা এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রায় সব তথ্য দিতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বিবরণী আর কবে প্রকাশিত হবে তা নিশ্চিত করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এই বিবরণী প্রকাশের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য শাখার। 

কেন এই বিবরণী বের করা হচ্ছে না তার সদুত্তর দিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ। তিনি বলেন, অধ্যাদেশে বিবরণী বের করার কথা বলা হয়ে থাকলে, তা বের করা উচিত। কেন বের করা হচ্ছে না তা জানেন না তিনি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য শিরীণ আখতারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান। 

১৯৯৭-৯৮ খ্রিষ্টাব্দে বের হওয়া বার্ষিক বিবরণী সম্পাদনা করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হক। অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া বলেন, বিবরণীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেয়া থাকে, যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশকে সম্মান জানিয়ে এটি বের করা হতো। কিন্তু এখন বের হয় না। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন কুমার চৌধুরী বলেন, বিবরণীতে কিছু স্পর্শকাতর তথ্য থাকে। এসব হয়তো কর্তৃপক্ষ লুকিয়ে রাখতে চায়। এখন শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। 

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, আইন অনুযায়ী প্রতিবছর বার্ষিক বিবরণী তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য। এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় কী কী কাজ করেছে সব ওঠে আসবে এই বিবরণীতে। 

প্রকাশের দায়িত্ব কার?

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদন, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার তৈরি করে তা বিভাগের শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্য শাখার। কিন্তু গত ২০ বছরে বিবরণী বের করার কোনো উদ্যোগ শাখাটি গ্রহণ করেনি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বলা আছে, সিন্ডিকেট পর্ষদের নির্দেশনায় প্রতিবছর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এই বিবরণী বের করতে হবে।

এই বিষয়ে তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার দিবাকর বড়ুয়া বলেন, তিনি এই পদে কাজ শুরু করেছেন বেশি দিন হয়নি। এটি কেন বের করা হয় না তা তিনি জানেন না। আগে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানাতে পারবেন।

বার্ষিক বিবরণীর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, এই বিবরণী কেন বের করা হয় না সেটা জানেন না তিনি। তবে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই বিবরণী

১৯৯৭-৯৮ ও ১৯৯৮-৯৯ খ্রিষ্টাব্দের বার্ষিক বিবরণীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের বাৎসরিক কার্যক্রম দেয়া হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ছাত্রছাত্রী, তুলনামূলক পাসের হার, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। বিবরণীতে বিভাগের শিক্ষকদের প্রকাশিত গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।   

পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি কলেজ) থেকে কতজন পাস করেছে সে বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া কোন হলে কতজন শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন তা উল্লেখ করা হয়েছে বার্ষিক বিবরণীতে। হলের সাংগঠনিক এবং ক্রীড়া ও উন্নয়নমূলক কার্যাবলি আছে কি-না তাও দেয়া হয়েছে। রয়েছে সামাজিক কর্মকাণ্ডের তালিকা, বিভাগের গ্রন্থাগারে বইয়ের তালিকা ও সংখ্যা।

সর্বশেষ প্রকাশিত বিবরণীতে বিভাগের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। বিভাগের আয়োজনে সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, সভা ও সম্মেলনের বিবরণ দেয়া হয়েছে। শুধু এসব নয়, বার্ষিক বিবরণীতে রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রতিটি শাখার দায়িত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে। দপ্তরের কোন শাখার কী কাজ তাও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিবরণীতে কতজন শিক্ষক দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য গিয়েছেন তাও বলা হয়েছে। এমনকি কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন তাও উল্লেখ করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028438568115234