চবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌ*ন হ*য়রা*নির অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আবার উত্তাল। তবে এটি কোনো ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনার জন্য নয়। কারণ, গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল মানেই বোঝা যেত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ইত্যাদি। তবে এবারকার উত্তাল হওয়ার কারণটি ভিন্ন। এটি হলো এক ছাত্রীকে ‘যৌন নিপীড়নের’ অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-ঘৃণার মিছিল। শিক্ষা গবেষণার সুষ্ঠু ও নিরাপদ, মানবিক শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠার জন্য। ভুক্তভোগী ছাত্রীর সহপাঠীরা ছাড়াও এগিয়ে এসেছেন অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার এমনটিই ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনিন্দিতা সরকার প্রথা প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদারের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো মিটিং চলছে। বেলা আড়াইটায় মিটিং শুরু হয়েছে। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ জানা গেছে, ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী ও অভিযুক্ত উভয়ের সঙ্গেই প্রশাসন কথা বলছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানরত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের হাতে, ‘যৌন নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন’, ‘যৌন নিপীড়কের স্থায়ী বহিষ্কার চাই’, ‘অস্থায়ী শাস্তি আর নয়, স্থায়ী সমাধান চাই’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হেনস্তাকারী কেন- প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত ফেস্টুন ও পোস্টার দেখা যায়। ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতাকর্মীরাও ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছেন।

তবে বেশি বিক্ষুব্ধ চবি রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা তাদের বিভাগের ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকের (মাহবুবুল মতিন) ছবি পোস্টারে সেঁটে বিচার চেয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দেন। এ সময় তারা ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে ও নিজ বিভাগ চত্বরেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্ত শিক্ষক থিসিস ল্যাবে ওই বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এটি আজকেই প্রথম নয়। তাদের কাছে প্রমাণ আছে তিনি (ওই শিক্ষক) আগের সিনিয়র ছাত্রীদেরও এভাবে হেনস্তার চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ‘আমরা এখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি এই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। যদি আমাদের দাবিপূরণ না হয় তাহলে আরো কঠোর কর্মসূচির দিকে যাব।’

তারা বলেন, ‘আমরা সেই বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি। আমরা চাই যতদ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়। যা ঘটেছে তা শুধু রসায়ন বিভাগ বা সায়েন্স ফ্যাকাল্টির জন্য নয়, পুরো বিশ্ব বিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।’

মানববন্ধনে উপস্থিত রসায়ন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘তিনি (অভিযুক্ত শিক্ষক) ক্লাসে ছাত্রীদের অনাকাক্সিক্ষতভাবে স্পর্শ করতেন। ছাত্রীরা এতে আপত্তি জানালে ওই শিক্ষক বলতেন- ও তো আমার মেয়ের মতো। আর এসব কথা বলে এ ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণকে স্বাভাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইতেন তিনি।’

একই বিভাগের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা বিভাগে ঢুকেই তার (ওই শিক্ষকের) নামে শুনেছি এসব কথা। আগে শোনা পর্যন্ত ছিল, এখন আমাদের তিনজন বান্ধবী তার সুপারভিশনে থিসিস করতে যাওয়ায় আমরা এসব কথার প্রমাণ পেয়েছি। তিনজনই আজ সাক্ষী দিয়েছে। এরকম শিক্ষক আমাদের দরকার নেই। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ তবে অনেক শিক্ষার্থী পরবর্তীতে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়া বা কম নম্বর দেয়ার ভয়ে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। কিন্তু তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা গেছে।

রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশিষ পালিতের কাছে এ ঘটনার বিষয়ে সংবাদকর্মীরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা সাড়ে ১১টায় একাডেমিক কমিটির সব শিক্ষক মিলে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনায় বসেছি। কিন্তু আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের সব কিছুর অভিভাবক হচ্ছেন উপাচার্য, তিনি বড় সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকেন। তবে আমরা আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তদন্তের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষককে সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, চবি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল মতিনের বিরুদ্ধে গত ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দেন একই বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্রী। অভিযোগে বলা হয়, থিসিস চলাকালীন সুপারভাইজার (এই অধ্যাপক) তাকে যৌন হয়রানি করেন। ল্যাবে একা কাজ করার সময় এবং কেমিক্যাল দেয়ার বাহানায় নিজ কক্ষে ডেকে দরজা আটকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টাও করেন ওই শিক্ষক। তবে ওই অধ্যাপক এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057380199432373