গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর অভিযোগ করেছেন, ‘সরকার চলমান ইস্যুগুলোকে আড়াল করতেই আদালতকে ব্যবহার করে কোটা পদ্ধতির একটি মীমাংসিত বিষয়কে সামনে এনেছে। এর মূল লক্ষ্য মূলত দেশে দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভারতের সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারক ও চুক্তির বিষয়গুলো আড়াল করা।’
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকাল সোয়া চারটার দিকে আলাপকালে এসব কথা বলেন নুরুল হক নুর। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সামনের সারিতে ছিলেন তিনি।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন নুরুল হক। পরে তিনি ‘গণঅধিকার পরিষদ’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমানে দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আলাপকালে নুরুল হক নুর বলেন, ‘গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একটি মীমাংসিত বিষয়কে আদালত উসকে দিয়েছেন।’
‘যেখানে সরকারের নির্বাহী বিভাগের আদেশে কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়েছিল, আমি আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা-আস্থা রেখেই বলতে চাই—২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের আট মাস ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফসল ছিল এই সিদ্ধান্ত, আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্ররা জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণাও দিলেন বাতিলের’, বলেন নুর।
৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র (৫ অক্টোবর) জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নুরুল হক বলেন, ‘প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোটা বাতিলের নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তকে আদালত কীভাবে বাতিল করতে পারে। আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আদালতকে ব্যবহার করে সরকারই রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য কোটা বাতিলের বিষয়টি সামনে এনেছে। আগেই দিনক্ষণ ছিল, আজকে (বৃহস্পতিবার) শুনানি হবে, কিন্তু হয়নি।’
‘মূলত চলমান যেসব ইস্যু রয়েছে, সাধারণ জনগণের দৃষ্টি সেদিক থেকে সরিয়ে দিতেই সরকার এটি করেছে’ বলে দাবি করেন নুরুল হক নুর।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলন একটি যৌক্তিক আন্দোলন। কোটা পদ্ধতি না থাকা দেশের জন্য প্রয়োজন। আমাদের দেশে চাকরিতে প্রতিযোগিতা নেই বলে ছাত্ররা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার সুযোগ থাকলে এটি হবে না। দেশের জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল করা দরকার।’
তিনি মনে করেন, সাধারণ ছাত্রদের চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন এবারও ব্যর্থ হবে না। সরকার এই আন্দোলন বন্ধ করতে পারবে না।’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা যারা বিগত দিনে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছি, সেই শিক্ষার্থীরা—সবাই আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, কোটা পদ্ধতি রাখা যাবে না। আমরাও প্রয়োজনে সাবেকরা মিলে, অভিভাবকরা মিলে এই আন্দোলনের পক্ষে থাকবো।’
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদ ও কোটা প্রথা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে কয়েকদিন ধরেই রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে। যদিও কিছু কিছু এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও বিক্ষিপ্তভাবে বাধা দিচ্ছেন।