চাঁদাবাজিতে সীমাবদ্ধ শিক্ষক সংগঠন!

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

পদোন্নতি বঞ্চিত প্রাথমিক শিক্ষক। তেলমারা, চাপা ও চাঁদাবাজির মধ্যে সীমাবদ্ধ বেশিরভাগ প্রাথমিকের সংগঠন। ফেসবুকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের তেল মেরে অতি আপনজন হওয়া যেন তাদের একমাত্র কাজ। তাদের উদ্দেশ্য আদর্শ ও লক্ষ্য অভিন্ন। 

প্রাথমিকের সাবেক সিনিয়র সচিব তার সময়ে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্তব্য পরায়ণ ও শিক্ষার্থীদের শব্দ ভান্ডার বৃদ্ধি করার প্রয়াসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। অবসরে যাওয়ার আগে শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের স্বার্থে ইতিবাচক বক্তব্য রেখে শিক্ষাবান্ধব ও শিক্ষকদের অতি আপনজন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড ও উচ্চ ধাপে ফিক্সেশনের কৃতিত্ব সচিব, প্রতিমন্ত্রী, নেতাদের কারো নয়, সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম স্কেলের দাবিতে আন্দোলনের ফসল। উচ্চ ধাপের কৃতিত্ব ভূমি মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু আমাদের প্রিয় নেতা একযোগে নিজ নিজ সংগঠনের কৃতিত্ব দাবি করে ফেইজবুকে বাদ্য বাজনা বাজিয়ে ব্যাপক আনন্দ উৎসব করেছেন। উচ্চধাপের কৃতিত্ব  নিজ সংগঠনের নামে প্রচার ও ভেজাল তেল দিয়ে প্রতিমন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ প্রশাসনকে ‘তেলকাইস্টা’ করে ফেলেছেন।

সংশ্লিষ্টদের বোধগম্য হচ্ছে, প্রকৃত দাবিদারতো আমরা নই। হায়রে স্বার্থবাজ দালাল শিক্ষক নেতৃত্ব। সব সময় তেল মারাই যেন তাদের কাজ। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার করা হয়। অথচ তার আদর্শ এখনো বেঁচে আছে। শিক্ষকদের স্বার্থ বর্জিত তেল মারা নেতৃত্বের অকাল মৃত্যু হওয়াটা স্বাভাবিক। 

প্রাথমিকের প্রায় সব নেতারা মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সচিব, ডিজি মহোদয়ের চারিদিকে অবস্থান করেছিলেন। হঠকারী নেতাদের চোখের সামনে প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি বিষয়টি  চূড়ান্ত হয়েছে। ভাবখানা এমন যে তারা চোখ থাকতে দৃষ্টিহীন। তখন তারা তেলের ড্রাম উজাড় করে সংশ্লিষ্টদের ভালবাসা অর্জনে তেল মেখেছেন। এখন কেন অভিনয়ের মায়াকান্না ? 

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

প্রধান শিক্ষক সমিতির রিয়াজ পারভেজ নেতৃত্বে প্রতিমন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ  করে পদোন্নতির বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে পত্র চালাচালি লক্ষ্য করা গেছে। তারা তাদের বেশি সমর্থন দাবি করলেও আরও দুটো অংশ বাইরে অবস্থান করছে। বিদ্যালয়ের চালিকা শক্তি সহকারী শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক তাদের গাইড হিসেবে কাজ করেছেন। সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বা সমস্যা উপেক্ষা করে পদোন্নতির মায়া কান্না কতটুকু সফলতা লাভ করবেন বোধগম্য নয়। সকল শিক্ষকের ঐক্যবদ্ধ দাবি বা মোর্চা সৃষ্টি করতে না পারলেও এ পদোন্নতির মায়াকান্না শুধু সোডাউন। এর পরেও পদোন্নতি বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া দেওয়ার জন্য অভিনন্দন।

সকল শিক্ষকদের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। প্রধান শিক্ষক ২য় শ্রেণির অফিসার হয়ে গেছে এহেন অহমিকার মানসিকতা মোটেই কাম্য নয়। শিক্ষকেরা মর্যদা থাকবে বৈষম্যহীন। থার্ড ও সেকেন্ড ক্লাস নয়। সকল শিক্ষক হবে ১ম শ্রেণি মর্যদা। উপজেলা পর্যায় থেকে সচিব সকলে ১ম শ্রেণি এ বিষয়টি ভাববেন।

মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সচিব, ডিজি, শিক্ষক নেতারাসহ সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিক শিক্ষায় আপনাদের আন্তরিকতা যে প্রশ্নবিদ্ধ সে উপলদ্ধিটুকু করবেন।

শিক্ষক ও বিশাল জনগোষ্ঠীর নিয়ে গঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জনবলের দিক থেকে মন্ত্রণালয়টি অন্য সব মন্ত্রণালয়ের চেয়ে অনেক বেশি। সারাদেশের আনাছে কানাছে ছড়িয়ে আছে এ মন্ত্রণালয়ের জনবল। অথবা হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল, ভেড়া, মাছ, গাছ-গাছালি শিক্ষাসহ সকল মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ক্যাডার সার্ভিস আছে অথচ প্রাথমিকে নেই। প্রাথমিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ অভিজ্ঞ শিক্ষক সৃষ্টি হলেও দক্ষ জনবল সৃষ্টি হচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল সৃষ্টি হবে। তাই প্রাথমিকে কেবলমাত্র সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজন। পরবর্তী শতভাগ পদ পদোন্নতি দিয়ে মহাপরিচালক পর্যন্ত নিতে পারলে প্রাথমিক শিক্ষা হবে দক্ষ ও অভিজ্ঞতা ভরপুর। 

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল সহজে প্রাথমিকের চ্যালেঞ্জসমূহ দূর করতে পারবে। অথচ প্রাথমিকে ক্যাডার সার্ভিস নেই। যার ফলে দক্ষ অভিজ্ঞ প্রশাসন গড়ে উঠছে না। এ ব্যাপারে শিক্ষক নেতা, কর্মকর্তা, ডিজি, সচিব, মন্ত্রী কারো কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান না। মানসম্মত প্রাথমিক বাস্তবায়নে প্রাথমিকে প্রধান চ্যালেঞ্জ প্রাথমিকের ক্যাডার সার্ভিস। শিক্ষক কর্মকর্তা সকলের ভাবনা এ মন্ত্রণালয় শিশুদের মন্ত্রণালয়। এ দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাতে হবে। এ মন্ত্রণালয় অবুঝ শিশুকে শিক্ষা দিয়ে মানব শিশুতে রূপান্তিত করে। কাজটি অনেক কঠিন। শিক্ষিত জনবলে ভরপুর এ মন্ত্রনালয়। সকল মন্ত্রণালয় থেকে সব চেয়ে বৃহৎ এ মন্ত্রণালয়। সামরিক সরকার প্রেসিডেন্ট ডিয়াউর সর্বপ্রথম ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে এ মন্ত্রণালয়ের সদস্যদের কাছে আত্মসর্ম্পন করে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। স্বাধীনতা দীর্ঘ ৫০ বছর পরেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্যাডার সার্ভিস নেই। আমাদের বর্তমান নেতৃত্ব, কর্মকর্তা সকলে যেন বাবু মাঝি কবিতার মতো সব জ্ঞান, অহমিকা সবই যেন মিথ্যা। প্রাথমিক শিক্ষা অভিজ্ঞ জনবলে ভরে উঠুক। ক্যাডার সার্ভিসবিহীন প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাধীন দেশের এ গ্লানি থেকে মুক্তি হউক। জয় বাংলা। বাংলাদেশের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা হোক আজকের ভাবনা।

লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032651424407959