চাঁদা না দিলেই খালেদের টর্চার সেলে চলত নির্যাতন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গড়ে তুলেছিলেন টর্চার সেল। কারো সঙ্গে ঝামেলা হলেই তাকে তাঁর লোকজন তুলে এনে সেই টর্চার সেলে ইলেকট্রিক শক পর্যন্ত দিত। তাঁর সেই টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। গত বুধবার গভীর রাতে সেই টর্চার সেলে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইলেকট্রিক শক দেয়ার মেশিন, লাঠিসহ নানা সরঞ্জাম। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ওমর ফারুক।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সূত্র মতে, রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার অফিস রয়েছে। সেই অফিসকেই বানানো হয়েছিল টর্চার সেল। কারো সঙ্গে বিরোধ হলে তাকে ধরে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো। তাদের শুধু পেটানো নয়, ইলেকট্রিক শকও দেয়া হতো। সেই ধরনের শক দেওয়ার মেশিনও সেখান থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বৈদ্যুতিক যে মেশিনটি উদ্ধার করা হয়েছে তাতে সুইচ চাপার পর সংযুক্ত তার বিদ্যুতায়িত হয়। সেই তার কোনো ব্যক্তির গায়ে লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রচণ্ড কষ্ট পায়। একটি সূত্র জানায়, খালেদ মাহমুদ কতজনকে এই টর্চার সেলে এনে টর্চার করেছে তেমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। তথ্যগুলো যাচাই করা হচ্ছে।

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেসব সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে তা দেখে ধারণা করা যায় সেখানে নির্যাতনের বিষয় ছিল।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘তাকে (খালেদ) গ্রেফতারের পর অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।’

অন্যদিকে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেফতার হওয়ার পর আলোচনা শুরু হয়েছে এরপর একই ধারার আরও কেউ গ্রেফতার হবেন কি না। বিষয়টি খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, সরকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে হার্ড লাইনে রয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা তথ্যে অপরাধের তালিকায় যাঁদের নাম এসেছে তাঁদের প্রত্যেকের বিষয়েই খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজন যুবলীগ নেতার তথ্য এসেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তাঁরা শুধু ক্যাসিনোই চালান না, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। আরেক নেতা যে কোনো সময় গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নেতা একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে যুবলীগের নেতা। তাঁর বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। 

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আলোচনাসভার প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি অনুষ্ঠানস্থলে যখন প্রবেশ করেন তখন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বক্তব্য রাখছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছবি তোলার জন্য ফটোসাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন। তখন আলোচকদের মধ্যে দুই-তিনজন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের বিষয়টির ইঙ্গিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ‘আজ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে সারা বাংলাদেশ।’ এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালনাকারী সাংবাদিক শাহনাজ শারমীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘ক্যাসিনো নিয়ে সাংবাদিকদের কিছু বলার জন্য অনুরোধ রয়েছে।’ পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনার পর ক্যাসিনোতে অভিযান প্রসঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা হলো প্রধানমন্ত্রী সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদী। তাঁর কণ্ঠস্বর অন্যায়-জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার। জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। যাঁরা নাকি অন্যায় করেন তাঁদের দমনের জন্য তিনি সচেষ্ট থাকেন। তিনি কাউকে ছাড় দেন না। যে-ই অন্যায় করেন... সংসদ সদস্যরাও কিন্তু বাদ যাননি। যাঁরাই দুষ্কর্ম করবেন, জনবিরোধী কাজ করবেন—তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যে ক্যাসিনোর কথা বলছেন, আমরা কোনো ক্যাসিনোর পারমিশন দিইনি। যাঁরা করছেন তাঁরা অবৈধ ব্যবসা করছেন। আজকেও তিনি বলেছেন, যাঁরা ক্যাসিনো করতে চান আপনারা পারমিশন নেবেন। কোথায় করবেন আমাদের জানিয়ে করবেন, যদি আমাদের দেয়ার মতো অবস্থা হয়, আমরা পারমিশন দেব। কিন্তু না জানিয়ে লুকোচুরি করে ক্যাসিনো করবেন, অবৈধভাবে করবেন, সেটা হতে দেয়া হবে না। আমরা কিন্তু বারের লাইসেন্স দিচ্ছি, কাদের দিচ্ছি? বড় বড় হোটেলগুলোতে এবং বড় বড় ক্লাবগুলোতে আমরা দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘যারাই ভুল করবে, দুষ্কর্ম করবে, কিংবা জনস্বার্থবিরোধী কাজ করবে, তাদের আইনের মুখোমুখি হতেই হবে, এটাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা।’

এ সময় এক সাংবাদিক যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উনি যেটা বলেছেন সেটা তাঁর নিজস্ব কথা বলেছেন। আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট, যে আইন মানবে না, অন্যায় করবে, তাকে আমরা আইনের মুখোমুখি করব।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003950834274292