চাইলেই কি ভারত পানি ছেড়ে দিতে পারে

ইমরান ইমন |

স্মরণকালের ভয়ংকর বন্যায় ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার অবস্থা ভয়াবহ। এ অঞ্চল এখন পানির নিচে, যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৪১ বছরেও এ অঞ্চলের মানুষ এমন ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়নি। ইতোমধ্যে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

সাধারণ বৃষ্টিতে এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। ভারত তাদের ডম্বুর গেটের ‘ভালোবাসার পানি’ ঢেলে দিয়ে এ অঞ্চলের এ করুণ দশা তৈরি করেছে। তা করেছে রাতের আঁধারেই। তারা সর্বশেষ ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এমন ঘটনা ঘটিয়েছিলো। ভারত কি আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি মানে? তাদের কি কখনো প্রশ্নের সম্মুখীন করা হয়েছে?

একেকবারের বন্যায় এ অঞ্চলের মানুষের কৃষি, মৎস, অবকাঠামো থেকে শুরু করে সার্বিক ক্ষতি হয় হাজার কোটি টাকা। দায় এড়াতে এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা তখন শুধু এক প্যাকেট চিড়া-মুড়ি নিয়ে মানুষের ‘করুণ দরোজায়’ হাজির হয় আর ফটোসেশন করে নিজেদের ঢাকঢোল পিটিয়ে বড় বড় প্রতিশ্রুতির কথা বলে মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে চলে যায়। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান তারা করে না কিংবা করতে চায় না। এখানে বড় ধরনের ‘দুরভিসন্ধি’ রয়েছে।

স্থানীয় সরকার ও মন্ত্রী-এমপিরা বারবার বিভিন্ন সময়ে ‘এ অঞ্চলের দুঃখ’ মুহুরী নদীর স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তা নির্মিত হয়নি। কেনো, কার নির্দেশে এখানে স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মিত হয় না-সে প্রশ্ন না উঠে পারে না। এ অঞ্চলের মানুষকে এ নিয়ে সোচ্চার হতে হবে।

যতো মুহূর্ত গড়াচ্ছে ততোই ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে ভারতের ছেড়ে দেয়া প্রলয়ঙ্কারী বন্যার পানিতে প্রতি মিনিটেই বাড়ছে এখানকার পানির মাত্রা। রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যন্ত। এবং পূর্বাভাস বলছে, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। 

লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। অথচ দুর্যোগের এতো ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও জনজীবন রক্ষার্থে প্রশাসন থেকে সরকারিভাবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করলেও তা দুর্যোগের ভয়াবহতার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। তা ছাড়া এদের কাছে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি তেমন নেই, যেগুলো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছে রয়েছে।

এ অঞ্চলের মানুষের চোখে ঘুম নেই। এখন প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে পানি ঢুকে গেছে, কোথাও ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, কোথাও গলা সমান পানি। মানুষ বাঁচার আকুতি জানিয়ে আহাজারি করছে। স্মরণকালের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে এই জনপদ। ত্রাণ বিতরণের চেয়ে এখন মানুষের জীবন রক্ষা জরুরি। এলাকার উঁচুভবন, সরকারি-অসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। সবাই একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ডের মতো দক্ষ বাহিনীগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য এখন মাঠে নামাতে হবে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা না করলে এ অঞ্চলে ‘ভয়াবহ ট্র্যাজেডি’ দেখা দেবে।

লেখক: কলামিস্ট

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই - dainik shiksha এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য - dainik shiksha ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান - dainik shiksha বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম - dainik shiksha উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের - dainik shiksha ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে - dainik shiksha ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034079551696777