চাকরির পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় শহরে কেন নয়?

মো. মাহমুদ আলম |

সারাদেশ বন্যার পানিতে প্লাবিত। অনেক খবরে এসেছে দিনাজপুরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দেশের অন্যান্য জেলার। তবু ঢাকা যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট কাটেন রুমমেট আব্দুর রউফ ভাই। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পরীক্ষা। খারাপ আবহাওয়ায় পরীক্ষা হবে কিনা সন্দেহ। রোগতত্ত্ব নিয়ে মাস্টার্স শেষ করে হল-এ পড়ালেখা করছেন ডিভিএম-এর আব্দুর রউফ ভাই। ঢাকা গিয়েছিলেন এ মাসের চার তারিখ। দিনাজপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার ভাড়া ছয়শ’ টাকা। যাতায়াতে লাগে বারোশ’ টাকা। খাওয়া-দাওয়া, সিএনজি, নাস্তা— সব মিলে হাজার দুয়েক টাকা চলে যায় একবার ঢাকা গেলে।

জুন থেকে এ মাস অর্থাত্ আগস্টের সতেরো তারিখ পর্যন্ত ছয়বার ঢাকা যেতে হচ্ছে তাকে। তিন মাসে শুধু ঢাকা যাওয়ার কারণেই বারো হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। তাই ভাবছেন ঢাকায় মেসে থাকবেন। টাকা না থাকার কারণে ঢাকা যেতে পারছেন না শাওন ভাই। এখন প্রশ্ন হলো শুধু ঢাকায় কেন? দেশের সব বিভাগীয় শহরগুলোতে পিএসসিসহ অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলো হতে পারে না? বিসিএস তো দিব্যি হচ্ছে। দেশের মানুষের সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দেয়া সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য, তখন কেনই বা ছাত্রদের এ দুর্গতি। পড়ালেখা শেষ করার পর পরিবার যখন সন্তানদের কাছ থেকে  অর্থনৈতিক সাপোর্ট চায়, তখন কেনই বা বেকারের দলে নাম লিখিয়ে তাদের কাছেই টাকা চাইতে হয় ঢাকা যাব বলে।

এটা না হয় গেল ছাত্রদের সমস্যা। সোনালি, জনতা, অগ্রণী, কৃষিব্যাংক ও অন্য পরীক্ষার দিনগুলোতে ঢাকাবাসীরাও যে চরম দুর্গতিতে পড়ে সেটা কারো অজানা নয়। এসব পরীক্ষার প্রতিটিতেই প্রায় দুই-আড়াই লাখ ছাত্র-ছাত্রী অ্যাপ্লাই করে। লাখ দেড়েকও যদি পরীক্ষা দিতে যায় তাহলে ঢাকায় যানজট হওয়ারই কথা। এ দেড় লাখ ছাত্রের প্রতিজনের যদি পাঁচশ’ টাকা করেও খরচ হয় তবে মোট খরচ এক কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা পরীক্ষা প্রতি। শুধু তাই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকা যাওয়া ছাত্রদের আশ্রয়ের জায়গা থাকে না। ঢাকার জনাকীর্ণ শত অলিগলি, অচেনা পরিবেশে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয় বেকার এ ছাত্ররা। জাতির ভবিষ্যত্ কর্ণধারের হাত থেকে টিউশনির টাকায় কেনা মোবাইলটা নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। অনেক সময় বাড়ি ফেরার জন্য মানিব্যাগে রাখা টাকাটাও হারাতে হয়।

এসব নিরুপায় শিক্ষার্থীর বাঁচাতে ও সরকারি চাকরিতে গ্রাম থেকে উঠে আসা ছাত্রদের নিযুক্ত করার জন্য পিএসসি, ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা বিভাগীয় শহরগুলোতে আয়োজন করা এখন সময়ের দাবি। এটা করতে পারলে যেমন ঢাকা শহরের যানজট কিছুটা কমে যাবে, গ্রাজুয়েট নামধারী বেকার অসহায় ছাত্ররাও সপ্তাহে সপ্তাহে ঢাকা যাওয়ার চিন্তা থেকে মুক্তি পাবে।

লেখক :মাস্টার্স,  ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স, হাজী দানেশ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069479942321777