জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাকরিচ্যুত করা হয় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে। চাকরি হারানোর পর অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী অমানবিক কষ্ট ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকিরা অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করছেন। সম্প্রতি গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাকরিচ্যুত এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ দাবিতে তারা আজ বুধবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর বোর্ডবাজারস্থ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। চাকরি রক্ষা কমিটির ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে চাকরিচ্যুত কয়েক শ কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন। এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা একাডেমিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন।
চাকরি রক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফ খন্দকারের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এনামুল করিম, চাকরি রক্ষা কমিটির মহাসচিব মিয়া হোসেন রানা, জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী পরিষদের নেতা মোসলেম উদ্দিন, তারেক মাহমুদ, আমির হোসেন, ওয়াহিদুজ্জামান নান্নু, মাসুদুর রহমান মাসুদ, আব্দুল মতিন, আজিজুল হক, আফজাল হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি আমিনুল আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন চাকরিচ্যুতদের দাবির প্রতি সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি যথাযথ অনুসরণ করে ২০০৩ ও ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন স্মারকে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে কতিপয় অসাধু কর্মকতা ও কর্মচারী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে আদালতকে বিভ্রান্ত করে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। যা ছিল চাকরিবিধি বহির্ভূত-অনিয়মতান্ত্রিক ও অনৈতিক।
বিগত প্রায় ১৩ বছরে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী অমানবিক কষ্ট ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে। বাকিরা অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে বর্তমানে দিনযাপন করছে বলে সমাবেশে তারা উল্লেখ করেন। চাকরিচ্যুতদের দ্রুত চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য তিনদফা দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর আবেদন করেছন চাকরি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ। দাবিগুলো হচ্ছে- অনতিবিলম্বে সকল চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন পূর্বক চাকরিতে পুনর্বহাল করা, নতুন করে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ না করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন করতে হবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভুয়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৮২১ জনকে নিয়োগ দেওয়ায় হাইকোর্ট তাদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।
এর আগে এসব কর্মচারীর নিয়োগ অবৈধ ঘোষণার আবেদন জানিয়ে সাবেক এমপি অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া হাইকোর্টে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ আগস্ট একটি রিট মামলা দায়ের করেন। সে সময় দীর্ঘ শুনানির পর ২২ আগস্ট ২০০৬ তারিখে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন। পরে গাজীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. আকম মোজাম্মেল হক (ওই রায়ের বিপরীতে) ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর রিভিউ মামলা দায়ের করলে আদালত কর্মচারীদের চাকরি থেকে অপসারণের রায় দেন।