চাকরি হারিয়েছেন ১৭ লাখ প্রবাসী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রাণঘাতী করোনার কারণে বিশ্বের শ্রমবাজারে প্রায় ১৭ লাখ বাংলাদেশী কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এদের বেশ কিছু এখন দেশে ফিরেছেন। আরও অনেকে দেশে ফেরার অপেক্ষা করছেন। অভিবাসী সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এত বিশালসংখ্যক মানুষ দেশে ফিরে কাজ পাবে না বলে আশঙ্কা করছেন জনশক্তি বিশেষজ্ঞরা। সরকারের তরফ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সরকার সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বুধবার (১৭ জুন) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ফিরোজ মান্না।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, চাকরি হারানোদের মধ্যে বড় একটি অংশ কাজ করতেন চুক্তিভিত্তিক নিয়মে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কয়েক লাখ কর্মীর চুক্তি বাতিল করেছে বিভিন্ন দেশের কোম্পানি। এছাড়া যারা বৈধভাবে নিয়মিত চাকরি করতেন তাদের বিরাট একটি অংশকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এদের বড় একটি অংশ দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। কর্মীদের বিরাট অংশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিশেষ ফ্লাইট চালু করার জন্য বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের এক কোটির বেশি লোক চাকরি করে আসছেন। এত বিপুলসংখ্যক কর্মীর চাকরি চলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি কারণ হবে। ধস নামবে দেশের অন্যতম প্রধান আয় রেমিটেন্স খাতে। এদিকে এশিয়ার ৫টি নাগরিক সংগঠনের মোর্চা এবং ট্রেড ইউনিয়ন যৌথভাবে কোভিড-১৯ বিশ্ব মহামারীর প্রেক্ষিতে প্রত্যাবাসিত অভিবাসী কর্মীদের অধিকার রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র বলছে, এক কোটির বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরি করছেন। এদের একটি অংশ কাজ করে চুক্তিভিত্তিক। এমন কর্মীর সংখ্যা কয়েক লাখ, যাদের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। তারা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। এখন তাদের? দৈনিক ভিত্তিক কাজ বাতিল করা হয়েছে। দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নিয়েছে। এখানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কোন প্রকার আলাপ করার সুযোগ রাখেনি তারা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ এমন সিন্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে মালদ্বীপ থেকেও এক লাখের বেশি কর্মী দেশে ফিরে আসবে। বর্তমানে বিশেষ ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য ও মালদ্বীপ থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনছে।

এদিকে প্রবাস ফেরত কর্মীদের ঋণ সুবিধা দেয়ার বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মরিরুছ সালেহীন বলেন, বিদেশ ফেরত কর্মীদের ঋণ দেয়া শুরু হবে। বিভিন্ন দেশ থেকে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ কর্মী দেশে ফিরেছেন। আর কয়েক কয়েক হাজার কর্মী দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। করোনাকালে মোট কতজন কর্মী দেশে ফিরবেন তার কোন সঠিক সংখ্যা আমরা এখনও জানি না। করোনার কারণে প্রবাস থেকে ইতোমধ্যে যে কর্মীরা ফেরত এসেছেন এবং যারা ফেরত আসবেন, তাদের সহায়তার জন্য সরকার সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীই এমন একটি ঘোষণা দেন। মন্ত্রণালয় তার বাস্তবায়ন করছে। পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কয়েক দফা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সব সভায় সচিবগণ বিষয়টিতে একমত হয়েছেন। অন্যান্য সেক্টরে সরকার যে ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে প্রবাস ফেরতদেরও একইভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। প্রবাস ফেরতদের বাংলাদেশ ব্যাকের গাইডলাইন অনুসরণ করেই ঋণ সুবিধা দেয়া হবে। সচিব পর্যায়ের প্রতিটি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে একটি ঋণ সুবিধা চালু করা হবে। এটা করা হবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে। এজন্য একটা গাইড লাইন তৈরি করতে হবে। এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী কাজ করেন। গত বছরও বিদেশে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ গেছেন মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কাজ করেন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ ও ইতালি। সব ক’টি দেশ করোনা ভাইরাসে তছনছ হয়ে গেছে। সবাই গৃহবন্দী হয়ে আছেন। ছোট আকারের বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় আছেন। এসব দেশের প্রবাসী বলছেন, বাইরে সব কাজ বন্ধ। অল্প কিছু জমা টাকা দিয়ে দিন পার করছেন। সামনে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

বেসরকারী খাতের জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, সবার আগে প্রবাসীদের নিরাপদ থাকা জরুরি। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বায়রা। তবে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। তারা দেশে ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন। অনেকে আবার চলেও এসেছেন। তারা দেশে কোন কাজ না পেয়ে বিভ্রান্তির জীবন কাটাচ্ছেন। তখন তারা নানা অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীদের অর্ধেকের বেশি চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। তারা আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলোর উচিত, ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য সংগ্রহ করে রাখা, যাতে পরবর্তী সময় তাদের নানাভাবে সহায়তা করা যায়। প্রবাসীদের পরিস্থিতি নজরদারির জন্য অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ কমিটি বলছে, অনেক জায়গায় নিয়োগকর্তার কাছ থেকে প্রবাসীরা সহায়তা পাচ্ছেন। যারা নিয়মিত কর্মী নন, তারা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

ড. সি আর আবরার (সমন্বয়ক, রামরু) মাইগ্রেন্ট ফোরাম ইন এশিয়ার পক্ষে সম্প্রতি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাব মতে, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর কারণে ১৯৫ মিলিয়ন ব্যক্তির কর্মসংস্থান অবলুপ্ত হয়ে যাবে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৫ মিলিয়ন কর্মী তাদের কর্মসংস্থান হারাবেন যাদের বিপুল অংশই হবেন অভিবাসী কর্মী। এই মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক লাখ এশীয় কর্মী নিজ দেশে ফিরে এসেছেন। এই সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যে বহু গুণ বেড়ে যাবে। বিশেষ করে ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনে ফিরে আসার সংখ্যা। অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ প্রতিষ্ঠান রামরু এই দাবি সমর্থন করছে ও সকল অভিবাসীর স্বার্থ রক্ষাকারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতি দাবিটি বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

অন্যদিকে ‘বিশেষ ধরনের পরিস্থিতি বিশেষ ধরনের উদ্যোগের দাবি রাখে’ বলে জানান মাইগ্রেন্ট ফোরাম ইন এশিয়ার সমন্বয়ক ইউলয়াম গয়েস। এই ধরনের অপরিকল্পিত প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে বহু কর্মী তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে কোভিড-১৯ নিয়োগকর্তা ব্যক্তি এবং কোম্পানিগুলোকে কর্মীদের মজুরি চুরির একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে কর্মী উৎস এবং গ্রহীতা রাষ্ট্রগুলো এই অন্যায়ের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার ৫ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর - dainik shiksha ৫ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00301194190979