চান্দিনায় রমরমা কোচিং বাণিজ্য

কুমিল্লা প্রতিনিধি |

চান্দিনা উপজেলায় চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। বিভিন্ন সময়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কোচিং বাণিজ্য বন্ধের আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু শিক্ষকরা সে আদেশ অমান্য করেই চালিয়ে যাচ্ছে কোচিং বাণিজ্য। 

এইচএসসি পরীক্ষার সময় সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না অত্র উপজেলায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা ফজলুল হক ছাত্তার কোচিং সেন্টার (চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন আশা অফিসের সামনে), নিমসার জুনাব আলী কলেজের এক প্রভাষক পরিচালিত ‘পরগ’ কোচিং সেন্টার (উপজেলা গেটের সামনে) যা এখন ওই প্রভাষকের ঘরে পরিচালিত হচ্ছে।

এ ছাড়াও চান্দিনা পৌরসভায় চান্দিনা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক, চান্দিনা ড. রেদোয়ান আহমেদ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং বাণিজ্য। এ ছাড়াও উপজেলার আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার।

প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও হাইস্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা তাদের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন এ কোচিং বাণিজ্যকে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কোচিংয়ের নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। অনেক কোচিং সেন্টার ৮০ থেকে ১০০ নম্বর বা জিপিএ-৫ পাওয়ার গ্যারান্টি দিয়ে দেদারসে এ ব্যবসা চলছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পৌর এলাকার অলি-গলির মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে শতাধিক কোচিং এবং প্রাইভেট সেন্টার। বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা রাস্তার পাশের একটি ছোট কক্ষ ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে আবার কেউ বেনামে চালু করেছেন কোচিং সেন্টার। প্রতি ব্যাচে ৫০-৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠদান করা হচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চান্দিনা পাইলট সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ি। কারণ স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়ার ফলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। যারা স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়ে না তারা এ বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এ ছাড়াও প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষকরা বিভিন্ন অজুহাতে ক্লাসে মারধর করে।

একাধিক অভিভাবক জানান, সন্তানদের প্রাইভেট পড়ানোর ইচ্ছে না থাকলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে পাঠাতে হয়। কারণ প্রাইভেট সেন্টারে পাঠালে সন্তানরা একটু বাড়তি যত্ন পায়। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষেই যদি শিক্ষকরা দায়িত্ব সহকারে শিক্ষাদান করতেন তা হলে সন্তানদের প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে পাঠানোর দরকার হতো না।

অনেক শিক্ষক সঠিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না এসে নিজস্ব কোচিং সেন্টারে ক্লাস করিয়ে থাকেন। বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্কুল কলেজের শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ করা হলেও এ উপজেলায় তার বাস্তবায়ন নেই।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মজিদ জানান-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকতে পারবে না। যদি কোনো শিক্ষক জড়িত থাকে তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের এমপিও বাতিল সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ব্যতীত বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠা কোনো শিক্ষক চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় কোনো কোচিং করাতে পারবে না।

এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং কোচিং বাণিজ্য বন্ধকরণ কমিটির সভাপতি এস এম জাকারিয়া জানান-আমি কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022640228271484