চাপমুক্ত শিক্ষক ও ফলপ্রসূ শিখন-শেখানো

মো. আজহারুল ইসলাম |

আর্থিক, মানসিক ও সামাজিক চাপমুক্ত শিক্ষক শ্রেণি পাঠদানে কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে শিখন-শেখানো কাজে নিয়োজিত সাধারণ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকেরাই বর্তমান শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যারা সবসময়ই নিজেদের কারিকুলাম বিষয়ক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের মননে-মগজে প্রবেশ করে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ঈর্ষার চোখে দেখা বড় পদে থাকা কিছু ব্যক্তি নিজেদেরকে শিক্ষকদের ওপর খবরদারি, শিক্ষকদের অধীনস্থ কর্মচারী হিসেবে দেখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও কথাবার্তায় তা প্রকাশ পায়। আর তাই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারক যারা, তাদেরকে শিক্ষকদের ব্যাপারে একটু আগ বাড়িয়ে কিছু বলা কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর অভাবও কিন্তু কম নেই। তাই শিক্ষকদের মানসিক চাপে রাখতে তারা বিভিন্ন সময়ে কর্তাব্যক্তিদের দ্বারা অমূলক ভিত্তিহীন কথা বলিয়ে নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন।

বর্তমান নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বিভিন্ন গবেষণা আলোচনার ভিত্তিতে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করা হয়েছে এবং শিখন-শেখানো কাজে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন মনস্তাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী। অথচ মাঝে মাঝে ভিত্তিহীন অমূলক কথা ছড়িয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে তারা অনেকাংশে দায়ী। চলমান শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে এ রকম অমূলক কথা বা আলোচনা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেন। তাই শুধু ‘বলার জন্য বলা’ থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর সবচেয়ে বড় কথা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পাঠদানে জড়িত শিক্ষকদের মানসিক চাপে রাখার চিন্তা মাথায় না আনাই ভালো। নতুবা এ সমস্ত নেতিবাচক মন্তব্য নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে অন্তরায় হতে পারে। তা ছাড়া পাঠদানে নিয়োজিত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের অধিকাংশই নিজেদের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে নিবিষ্ট রেখে জাতি গঠনে অবদান রাখার চেষ্টায় ব্রত হয়েছেন। তবে নতুন কারিকুলাম ২০২২ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে যা দাঁড়াতে পারে তা হচ্ছে শিক্ষকদের আর্থিক ও মানসিক চাপ। 

বর্তমানে গবেষণাধর্মী এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিখন-শেখানো কাজে নিয়োজিত শিক্ষকদের সতেজ মন-মানসিকতা নিয়ে আর্থিক মানসিক চাপমুক্ত থেকেই শ্রেণি পাঠদানে যাওয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকসহ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাপর ব্যক্তিরা সাধারণ শিক্ষকদের চাপে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বললেও বেশি বলা হবে না। নতুন শিক্ষাক্রম ২০২২ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং গবেষণাধর্মী। এই শিক্ষাক্রম বাংলাদেশকে উচ্চশিক্ষাসহ বিশ্বের বাজারে টিকে থাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে আশা করি। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বিষয়ভিত্তিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাঝে কোনোরকম ঘাটতি ছাড়াই উৎসাহ উদ্দীপনা আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুসম্পর্কের অভাব পরিলক্ষিত হয়। 

প্রায় ৯০ ভাগ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সাধারণ শিক্ষকদের সঙ্গে একটা বৈরী আচরণ করে থাকেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক একে অপরকে সুবিধাভোগীতে পরিণত করেন যা সাধারণ শিক্ষকদের ওপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা পাঠদানসহ সার্বিক বিষয়ের ওপর এর প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসারদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকদের নিয়োগ বাণিজ্যসহ বহুবিধ কারণে একটা সম্পর্ক থাকায় অফিসাররা প্রধান শিক্ষকদের জবাবদিহিতায় আনার কখনো মনে করেন না। এ কারণে প্রধান শিক্ষকরা প্রায় সময়ই সার্বক্ষণিক প্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিবিষ্ট না থেকে নিজেদের কাজেই বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকেন। যেহেতু তাদের ধারণা হয়ে গেছে সাধারণ শিক্ষকদের কাছে তাদের জবাবদিহিতার কোনো কিছু নেই। আর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তো তার পক্ষে আছেনই। তাই নতুন শিক্ষাক্রম সফল বাস্তবায়নে ম্যানেজিং কমিটিসহ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের পুরোপুরি জবাবদিহিতার আওতায় আনতে জরুরি কাঠামোগত সংস্কার আশু প্রয়োজন। 

ইতোমধ্যে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সারা দেশে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োগ সফলভাবেই চলছে, সেই সঙ্গে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও শেষ হয়ে গেলো সম্প্রতি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এতোকিছুর পরও শিক্ষকদের মানসিক চাপে রাখতে নীতিনির্ধারকদের নেতিবাচক উক্তি, আলাপ আলোচনা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি অনুধাবন করে শ্রেণি পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষকদের আর্থিক, মানসিক ও সামাজিক চাপ দেয়া পরিহার করি। শিক্ষকদের যতোটা সম্ভব উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে আর্থিক, মানসিক ও সামাজিক চাপমুক্ত রেখে সার্বক্ষণিক ইতিবাচক মন-মানসিকতা দিয়ে শ্রেণি পাঠদানে পাঠানোর সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশ তৈরি আমাদের সবার নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।

লেখক : শিক্ষক, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট, পঞ্চগড় 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ - dainik shiksha শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045180320739746