গত বছরের ১৩ জুলাই অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৮ টাকা পেয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল বাশার হাওলাদার। তিনি রাজধানীর রহমতুল্লাহ মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে যাওয়ার সময় ছিলো ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে। কিন্তু ৬০ বছর পার হলেও তিনি অবৈধভাবে স্কুলটিতে কয়েকমাস ছিলেন। তহবিল তছরুপসহ বিভিন্ন অভিযোগ দেয় তারই সহকর্মীরা। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে চিঠি দিয়ে তাকে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। সেই হিসেবে তিনি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে অবসরে যাননি। তিনি মিথ্যাচার করছেন। স্কুল ছাড়তে বাধ্য হওয়ার কয়েকমাস পরে অবসর ও কল্যাণট্রাস্টের টাকার জন্য আবেদন করেন তিনি। আবেদন করার পরপরই করোনার কারণে লকডাউন শুরু হয়। সবকিছু বন্ধ থাকে। [inside-ad1]
এরপর লকডাউন তুলে দেয়ার পর গত বছরের জুলাই মাসে অবসর ও কল্যাণের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ ফের শুরু হয়। হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষক তিন/চার বছর আগে টাকার জন্য আবেদন করলেও তাদের আবেদন অনুমোদন না হলেও বাশার হাওলাদারেরটা হয়েছে। এবং ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই ইএফটির মাধ্যমে তাকে ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৮ টাকা দেয়া হয়। অবসর সুবিধা বোর্ডের একাধিক সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে অবসর সুবিধা বোর্ডর সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী মঙ্গলবার দুপুরে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল বাশার হাওলাদারকে গত বছরের ১৩ জুলাই আগে অবসর সুবিধার টাকা দেয়া হয়েছে।’
এদিকে বাশার হাওলাদার তার নিজের ফেসবুকে দাবি করেছেন যে তিনি টাকা পাননি। যেখানে তিনি কৌশলে বলেছেন, ‘কল্যাণট্রাস্টের টাকা এখনো পাইনি।’ অবসরের তারিখ বলেছেন মে মাস, সেটাও মিথ্যা। তবে, তিনি অবসর সুবিধার টাকার বিষয়ে কিছু বলেননি। অবসরের টাকা হাতে পাওয়ার তথ্যপ্রমাণ দৈনিক শিক্ষার হাতে রয়েছে। কল্যাণট্রাস্টের টাকাও শিগগিরই হাতে পাবেন বাশার হাওলাদার, একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কল্যাণের টাকা খুব শিগগিরই হাতে পৌঁছে যাবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
►অবৈধভাবে সেলিম ভূইয়াকে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা দেয়া, খতিয়ে দেখছে মন্ত্রণালয়
►শিক্ষকদের পক্ষে হঠাৎ সরব ফজর আলীরা, নেপথ্যে দুর্নীতি?
গতকাল দৈনিক শিক্ষার একজন পাঠকের পাঠানো লেখা ছিলো এমন : ‘কোনো কাউন্সিল না, কোনো ভোটাভুটি না, নিজের ঘোষণায় নিজেই সভাপতি। কিন্ডারগার্টেনে চাকরিকরা মেয়েকে বানিয়েছেন সংগঠনের সহ-সভাপতি। সংগঠনের নামও দিয়েছেন নিজেই। এই নামে কোনো শিক্ষক সংগঠন নেই, হওয়াটাও শোভন কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে জাত শিক্ষকদের। অবসরে যাওয়ার দুই-তিন বছর আগে খুব গরম-গরম কথা বলতেন। সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষে লোক দেখানো কথা বলতেন। কিন্তু অবসরের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সুর বদলে যায় তার। গোপনে হাত মেলান নিরীহ শিক্ষকদের জমানো টাকায় অবৈধভাবে বেতন নেয়া ও ব্যাংকে এফডিআর করে সুদের টাকা খাওয়া ও ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষকদের পাওনা টাকা দেয়া স্বঘোষিত ও নিন্দিত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে। এটা কিন্তু নতুন নয়। একই কাজ করেছেন সেলিম ভুইয়া, চৌধুরী মুগিছ উদ্দিন মাহমুদ, দেলোয়ার হোসেন, আবদুর রশিদসহ অনেকেই। যেখানে বছরের পর বছর টাকা পাচ্ছেন না হাজার হাজার শিক্ষক, মারা যাচ্ছেন টাকা ছাড়া।
ঘুষ ছাড়া টাকা মেলে না সাধারণ শিক্ষকদের জন্য। সেখানে অবসরের পর আবেদন জমা দেয়ার তিনমাসের মধ্যে টাকা পেলেন কিভাবে আবুল বাশার হাওলাদার? এটা খুঁজে বের করে দৈনিক শিক্ষায় একটি প্রতিবেদন চাই।’
এই চিঠিটি গতকাল দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশ হয়েছে।