চমেকচার ছাত্রকে নির্যাতন : গুরু পাপে লঘু দণ্ড পেলেন সাত ছাত্রলীগ কর্মী

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রাবাসে চার ছাত্রকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। যদিও শাস্তি হিসেবে ঘটনায় জড়িত সাত ছাত্রলীগ কর্মীকে শুধু তিন থেকে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমন শাস্তিকে ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’ বলছেন ভুক্তভোগী ছাত্র ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। 

যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন– কলেজের ৫৯তম এমবিবিএস ব্যাচের ছাত্র অভিজিৎ দাশ (তিন বছরের জন্য বহিষ্কার), একই ব্যাচের রিয়াজুল ইসলাম জয় ও ৬২তম ব্যাচের সাজু দাশ, সৌরভ দেবনাথ (দুই বছরের জন্য বহিষ্কার), ৬৯তম ব্যাচের মাহিন আহমেদ এবং ৬২তম ব্যাচের জাকির হোসেন সায়েল ও মো. ইব্রাহিম খলিল সাকির (দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার)।

এর আগেও এই সাতজন নানা অপরাধে যুক্ত ছিলেন। গত বছরের ২৯ অক্টোবর চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষের সময় দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি জে আকিবকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। মারধরে আকিবের খুলি ফেটে যায়। ওই ঘটনায়ও তাঁদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করেই দায় সারে কলেজ কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত তাঁদের বহিষ্কারাদেশ থাকলেও ওই সাতজন হলেই থাকতেন।     

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, তাঁদের পরিবার, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ অন্তত ২৫ জনের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়ে ওই সাত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিভিন্ন অপরাধের তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয় তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে চার ছাত্রকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। এ প্রসঙ্গে চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, ‘চার ছাত্রকে নির্মম নির্যাতন করাসহ অতীতের বেশ কিছু শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে ওই সাতজনের বিরুদ্ধে। তাই তদন্ত কর্মকর্তা, একাডেমিক স্তরের সব কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীকে এর আগেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আমরা মনে করেছিলাম তাঁরা শোধরাবে। কিন্তু তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে গেছে।’ 

বারবার এমন অপরাধে যুক্ত হওয়ার পরও কেন ছাত্রলীগের এসব কর্মীকে কলেজ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো না– এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘একাডেমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এখানে চাইলে কেউ এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আপাতত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছি। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা আবার বৈঠক করব। আইনে কী আছে, তা খতিয়ে দেখব। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে করা বৈঠকে ওই সাত ছাত্রকে শাস্তি হিসেবে অন্য কোনো মেডিকেল কলেজে বদলির বিষয়টিও উঠে এসেছে। সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি।’

তদন্ত কমিটির প্রধান চমেক উপাধ্যক্ষ ডা. হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে যা যা করার, সব করা হবে। বহিষ্কৃতরা ছাত্রাবাসে আর থাকতে পারবে না। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নির্যাতনের শিকার চার ছাত্র যাতে ক্যাম্পাসে ভয়হীনভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে, সে জন্য তাদের মা-বাবাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো হলো– বহিষ্কার সাত ছাত্রের অভিভাবককে ডেকে কঠোর সতর্কতা দেওয়া। ছাত্রাবাসে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়াতে একজনের পরিবর্তে একাধিক হোস্টেল সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া। ছাত্রাবাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা। প্রতিবছর অভিভাবকদের সঙ্গে প্যারেন্টস মিটিং করা। রাষ্ট্র্র ও আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড নজরদারির জন্য শিক্ষক চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ভিজিলেন্স টিম গঠন।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চিঠির বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি সাদিকুর রহমান বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি। ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় যেহেতু কোনো মামলা হয়নি, তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের চিঠি পাওয়ার পর পুলিশ সতর্ক আছে, যাতে অভিযুক্তরা ছাত্রাবাসে প্রবেশ করতে না পারে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে তাঁরা যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি শিবিরকর্মী সন্দেহে চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসের দুটি কক্ষে চার ছাত্রকে ডেকে নিয়ে বেঁধে রাতভর নির্মম নির্যাতন চালান ছাত্রলীগের একদল কর্মী। ক্রিকেট স্টাম্প, লাঠি ও লোহার পাইপ দিয়ে পেটানো হয় তাঁদের। নির্যাতনের শিকার চার ছাত্র হলেন– কলেজের ৬২তম ব্যাচের এম এ রায়হান, মোবাশ্বের হোসেন, জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেন। ঘটনার পর গুরুতর আহত সাকিব ও জাহিদ অনেক দিন চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে রাতের নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী ছাত্র ও তাদের পরিবার। এর পর ঘটনা তদন্তে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর - dainik shiksha শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী - dainik shiksha আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে - dainik shiksha জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054950714111328