চার বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেট প্রতিনিধি |

স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে সিলেটবাসীকে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চার বছর আগে এই উপহার দেয়ার পর সিলেটবাসী অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন বিষাদের ছায়া। অস্থায়ী একটি অফিসে গণহারে জনবল নিয়োগ হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফল আজও ভোগ করতে পারেননি তারা। স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ হয়েছে; তবে কবে নাগাদ স্থাপনা তৈরি হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এমনকি প্রায় দেড় বছর আগে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গমাতার নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত হলেও রহস্যজনক কারণে তাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলছেন, সব প্রস্তুতিই সম্পন্নের দিকে। যদিও তার মেয়াদ ক’দিন আগে শেষ হয়েছে এবং পূণরায় এই পদে তিনিই থাকছেন বলে গুঞ্জন আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট-এর সভাপতি এ নিয়ে ক্ষােভ প্রকাশ করে বলেছেন, গত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখাতে না পারা উপাচার্যের ব্যর্থতা। এখানে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ তার। আর বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনে (বিএমএ)-এর সভাপতি ডা. দুলাল আহমদ চৌধুরীর মতে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গতা পেতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়ােজন; তবে এরইমধ্যে এতো জনবল নিয়োগের বিষয়টি উপাচার্যই ভালো বলতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের চতুর্থ সরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান এবং বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নগরের চৌহাট্টায় একটি ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী কার্যক্রম শুরু হয়। নিয়োগ দেয়া হয় বিশাল জনগোষ্ঠি। নিয়োগপ্রাপ্তদের সিংহভাগই এখন পর্যন্ত বসার চেয়ারটেবিল পাননি। হাজারের ওপর ছাত্র-ছাত্রী উন্নত মানের পড়ালেখা করার সুযোগ ও এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল বিভাগ থাকার কথা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু গত চার বছরে তার কিছুই হয়নি।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট-এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সিলেটবাসীর জন্য আনন্দ ও গর্বের। কিন্তু চার বছরের মধ্যেও এর দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথা উপাচার্যের ব্যর্থতা। তিনি আরও বলেন, এখনও স্থায়ী স্থাপনা হয়নি; অথচ অস্থায়ী একটি ভবনে এতো জনবল নিয়োগ, এটা অনিয়ম ও দুর্নীতি ছাড়া কিছু নয়। মানুষ যদি এই বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে কোন সুফলই না পায় তাহলে এতো লোক অস্থায়ী কার্যালয়ে বসে কি কার্যক্রম করছে?

তবে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর সভাপতি ডা. দুলাল আহমদ চৌধুরী বলেন ভিন্ন কথা। তার মতে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় পূণাঙ্গতা পেতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখনও সেই বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। আর সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়তো মাত্র চার বছর। এখানে অনেক বিষয় থাকে। জমি অধিগ্রহণ, এর জন্য টাকা, স্থাপনা তৈরির জন্য সরকার থেকে টাকা বরাদ্ধসহ নানা বিষয়। এর সুফল পেতে হলে প্রায় ২০ বছর সময়ের দরকার। তবে এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এতো জনবল নিয়োগ কেন তা উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর সিন্ডিকেটের এক সভায় সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামকরণের প্রস্তাবটি সম্প্রতি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন সিলেট-৩ আসনের সাংসদ হাবিবুর রহমান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ এ কে আবদুল মোমেন নতুন নামকরণে সমর্থন জানিয়ে একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও) দেন। পরে সিন্ডিকেট সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত রহস্যজনক কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। সিন্ডিকেটের ওই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন ভিসি মোর্শেদ চৌধুরী।

এতে সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংসদ গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর তৎকালীন সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, আর টি এম ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ আল-কবির, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাখাওয়াত হোসেন প্রমূখ।

এ বিষয়ে সিলেট-৩ আসনের সাংসদ হাবিবুর রহমান বলেন, বঙ্গমাতার নামে বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণের পেছনে যারা দায়িত্বশলীল ছিলেন তারা সঠিক সময়ে সেই ব্যবস্থা নেননি। পরে আমি উদ্যোগ নেয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি অনুমোদনে সই করেছেন। বর্তমানে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে আছে; যা কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে নামকরণের বিষয়টি বিলম্বের কারণ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য দক্ষিণ সুরমা এলাকায় জায়গা দেখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে টাকা বরাদ্ধের বিষয়টিও অনুমোদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’ বঙ্গমাতার নামে নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি আমরাই উদ্যোগ নিয়ে করেছি। এ সংক্রান্ত ফাইল প্রধানমন্ত্রী সই করার পর রাষ্ট্রপতি কার্যালয় হয়ে সম্ভবত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’ তবে এ বিষয়ে প্রশাসনিক অবহেলার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025818347930908