চাকরির বাজারে সোনার হরিণ ধরার জন্য সাহিত্য ছেড়ে আত্মউন্নয়নমূলক বইয়ের দিকে ঝোঁক বাড়ছে। প্রেরণাদায়ক বক্তাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন চাকরিপ্রার্থী তরুণরা। আর তাদের লেখা প্রেরণাদায়ক বই-ই হয়ে উঠছে অন্যতম অবলম্বন। সারাবিশ্বজুড়েই আত্ম উন্নয়নমূলক বইয়ের বাজার বড় হচ্ছে। বাংলাদেশেও প্রতিবছর এসব বই প্রকাশ হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফা বুলবুল।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, নতুন বাস্তবতার এই চিত্রই ফুটে উঠেছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। অনুপ্রেরণাদায়ক আর আত্মোন্নয়নমূলক অনেক বই দেখা গেছে বইমেলায়। সেগুলো বিক্রিও হচ্ছে। আর পাঠকের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে জনপ্রিয় অনেক লেখকই আত্মোন্নয়নমূলক বই লিখতে শুরু করেছেন। মেলায় এ ধরনের বইয়ের বিক্রি যেমন বেড়েছে তেমনি চাহিদাও বেড়েছে। তবে কারো কারো অভিযোগ আত্মোন্নয়নমূলক বা প্রেরণাদায়ক বই জনপ্রিয় হয়ে উঠলে সাহিত্যের বইয়ের বাজারে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মনন চর্চা বাধাগ্রস্ত হবে। তবে লেখকরা বলছেন, আত্মোন্নয়নমূলক বই কিনতে কিনতেই পাঠকরা সাহিত্যের সৃজনশীল বই কিনবে।
আত্মোন্নয়নমূলক বই খুচ্ছেন পাঠকরা
প্রেরণাদায়ক বক্তা হিসেবে ইতোমধ্যে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রেজ সৃষ্টি করেছেন সাদমান সাদিক, আয়মান সাদিক, গোলাম সামদানি ডন, সোলায়মান সুখনসহ অনেকেই। তাদের বক্তব্য শুনতে তরুণরা যেমন মুখিয়ে থাকে তেমনি তাদের বই কেনার জন্য ব্যাপক আগ্রহ। এবারের মেলায় আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিকের ‘কমিউনিকেশন হ্যাকস’ ও ‘স্টুডেন্ট হ্যাকস’ নামের দুটি বই এনেছে তাম্রলিপি। একই সঙ্গে মনিরুদ্দিন তামিম ও সাদমান সাদিকের ‘ব্রেইন বুস্টার’ ও গোলাম সামদানি ডনের ‘বিষন্নতাকে জয় করো’ বইও প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ মেলায় এনেছে জাহাঙ্গীর আলম শোভনের ‘লেখাপড়া করে যে: ছাত্রজীবনে কর্মজীবনের প্রস্তুতি’ আত্মউন্নয়নমূলক বইটি। এছাড়া আয়মান সাদিক ও সাকিব বিন রশীদের ‘লোকে কী বলে’ বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আদর্শ। অনন্যা প্রকাশ নিয়ে এসেছে মোস্তফা কামালের অনুপ্রেরণাদায়ক বই ‘স্বপ্নবাজ’। অনুপ্রেরণাদায়ক বই পড়ে উদ্বুদ্ধ হওয়া তরুণ যুনায়েদ ফারহান বলেন, এক সময় পড়ায় মন বসতো না। আগামীর জীবন নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকতাম। তবে আত্মউন্নয়নমূলক বই পড়ে নিজেকে পাল্টাতে পেরেছি।
উৎস প্রকাশনীর মোস্তফা সেলিম বলেন, আত্মোন্নয়ন বইগুলোর চাহিদা তরুণদের মধ্যেই বেশি। জীবন ও বাস্তবতার প্রয়োজনেই তারা এসব বই কিনছে। ভারতীয় হাইকমিশনারের গ্রন্থমেলা পরিদর্শন : বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ বিকেল ৪ টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরির্শন করেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী তাঁকে গ্রন্থমেলায় স্বাগত জানান এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর তিনটি গ্রন্থ উপহার দেন।
মূলমঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪ টায় অনুষ্ঠিত হয় সাইমন জাকারিয়া রচিত সাধক কবিদের রচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন সুমনকুমার দাশ। আলোচনায় অংশ নেন নাসির আহমেদ এবং স্বকৃত নোমান। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন সাইমন জাকারিয়া। সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
জমে উঠেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মন ও মানসকে দারুণভাবে প্রভাবিত করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমনই একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সমভাবে সবার জন্য আন্তরিকভাবে ভালোবাসা পোষণ করতেন। অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের সাহিত্যচর্চা ও রচনাকর্মে বঙ্গবন্ধুর উজ্জ্বল উপস্থিতি এবং ভাবাবেগ ও ভক্তিবা সে তথ্যকেই প্রমাণিত করে। মূলত নিভৃতচারী সাধকের মন ও মননকে কর্মগুণেই শেখ মুজিব ছুঁয়ে যেতে পেরেছেন। যে সাধু-গুরু-বাউল-ফকির-কবিয়ালদের নিগূঢ়তত্ত্ব ও দেহবাদী আচারে-ক্রিয়ায় জীবন যাপনের কথা, তাঁদের রাজনৈতিক সচেতনতাবোধ সমাজের অগ্রসর শ্রেণির তুলনায় কোনোভাবেই কম ছিল না, তার প্রমাণ সাইমন জাকারিয়ার বইয়ে পরতে পরতে মেলে।
আলোচকরা বলেন, লোকায়ত বাংলার লোককবি ও সাধকদের সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরব উপস্থিতির অত্যন্ত তথ্যমূলক ও বিশ্লেষণধর্মী পাঠ এ গ্রন্থ। বঙ্গবন্ধু বাংলার সংস্কৃতি, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে আছেন। বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাউল, সাধক ও কবিরা বাংলার সংস্কৃতিকে যেমন অন্তরে ধারণ এবং চর্চা করেন তেমনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও তারা মহিমান্বিত করেছেন তাদের পুথি, সংগীত ও লোককর্মের মাধ্যমে। লোকসাহিত্যে জাতির পিতাকে নিয়ে যত গ্রন্থ ও গবেষণা হয়েছে তার মধ্যে সাইমন জাকারিয়ার এ গ্রন্থটি পথিকৃৎ হয়ে থাকবে। গ্রন্থের লেখক বলেন, এদেশের অবহেলিত বিস্মিত লোকসাধক ও কবিগণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে ছিলেন সদাসচেতন। এসব সাধক কবিদের পরিচিতিতেই বিশ্বের কাছে বাংলা সংস্কৃতি আজ মর্যাদার আসন পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বাংলার লোক সংস্কৃতি ও লোক সাধকদের আপন করে নিয়েছিলেন।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা
সভাপতির বক্তব্যে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাংলার লোকসাধকদের নির্মল ও নিঃস্বার্থ ভাষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমগ্র জীবন উঠে এসেছে। সাধক কবিগণ বাংলার বৃহত্তর লোক সমাজের প্রতিনিধি। ইতিহাসের নিরপেক্ষতা বিচারে এসব সাধক-কবিদের সাক্ষ্য আমাদের জন্য অপরিহার্য। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ইকবাল হাসান, ফেরদৌস নাহার, আশরাফ আহমেদ এবং জাকির জাফরান। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, মাহমুদ আল জামান, ইকবাল হাসান, আশরাফ আহমেদ, জাফর আহমদ রাশেদ, ফারুক আহমেদ এবং রাসেল রায়হান। সন্ধ্যায় ছিল শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুর সুধা সংগীতায়ন’ এবং শাহ্ সাদিয়া আফরিন মল্লিকের পরিচালনায় ‘হামিবা সাংস্কৃতি একাডেমী’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, প্রমোদ দত্ত এবং সেতু।
নতুন বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে মোট ২০৭টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সাইমন জাকারিয়ার লেখা বই ‘সাধক কবিদের রচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি’, রাত্রি প্রকাশনী এনেছে আহসান হাবীবের জোকস্রে বই ‘জাস্ট জোকস’, অনন্যা এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস ‘প্রিয়দর্শিণী’, একই প্রকাশনী থেকে এসেছে ফকির আলমগীরের ‘স্মৃতি আলাপনে মুক্তিযুদ্ধ’, দি রয়েল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশ হয়েছে আলী ইমামের কিশোর গল্পের বই ‘রুপোলি আলো’, অনন্যা প্রকাশ করেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কবিতার বই ‘কবিতা সমগ্র-২’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স প্রকাশ করেছে কবীর চৌধুরীর ‘পুশকিন ও অন্যান্য’, শিকড় প্রকাশ করেছে রকিব হাসানের কিশোরগল্প ‘ভূত সমগ্র-২’, ডেইলি স্টার বুকস প্রকাশ করেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাক্ষাৎকার গ্রন্থ ‘আজ ও আগামীকাল’, জলকথা প্রকাশ থেকে এসেছে আফরোজা বেগমের ‘বিকির্ণ জীবনে ছন্দে আবাহন’।