চীনে আর্থিক খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যে দেশটির আরও একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক অব চায়নার ব্যাংকের সাবেক এক ম্যানেজারকে দুর্নীতির মামলায় এ দণ্ড দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তির নাম জু গুউজুন। তিনি ১৯৯৩ থেকে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দক্ষিণ চীনে ব্যাংক অব চায়নার একটি শাখার প্রধান ছিলেন। ৩২৫ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। খবর-বিবিসি
দেশটির অন্যতম বড় দুর্নীতির এ মামলাটি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচির একটি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। চীনের ব্যাংকিং সেক্টরকে দুর্নীতিমুক্ত করতে দুর্নীতি নির্মূল কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এর আলোকে বেশকিছু ব্যাংক কর্মকর্তা অভিযুক্ত ও আটক হয়েছেন।
আদালতের বিবৃতি অনুসারে, জু গুউজুন এবং আরও দুইজন ব্যাংক অব চায়নার কর্মকর্তা মিথ্যা ঋণ পাওয়ার জন্য তহবিল ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের ত্রুটির সুযোগ নিয়েছিলেন। প্রতারণামূলক ঋণ ও অন্যান্য অ্যাকাউন্টে ব্যাংকের তহবিল তছরুপের অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
আদালত তার যাবতীয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। পাশাপাশি তাকে আজীবন রাজনৈতিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।
জু’র দুই সহযোগীকে এর আগে ১২ ও ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চুরি হওয়া অর্থের ২ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি এখন উদ্ধার করা হয়েছে।
জু ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুই বছর আগে তাকে জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন করতে হয়। প্রত্যর্পণের আগ পর্যন্ত ২০ বছর ধরে তিনি সেখানে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, দোষী হলে এর বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন না।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অঙ্গীকারের পদক্ষেপ হিসেবে এরই মধ্যে চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অভিযুক্ত অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে জরিমানা করা হয়েছে, কাউকে জেল দেওয়া হয়েছে। কারও ব্যাপারে তদন্ত চলছে। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিলাসী জীবনধারাকে দমন করা দরকার।
গত অক্টোবরে ব্যাংক অব চায়নার একজন সাবেক চেয়ারম্যানকে ঘুষ ও অবৈধ ঋণ দেওয়ার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা লিউ লিয়াঞ্জ এই বছরের মার্চ মাসে তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। চায়না লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াং বিনকে সেপ্টেম্বর মাসে ঘুষের দায়ে প্যারোল ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
দেশের আর্থিক খাতে দুর্নীতি নির্মূলের অভিযান ক্রমশ বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। এপ্রিল মাসে কর্মকর্তারা সতর্ক করেছিলেন যে, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শেষ হয়নি।