চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল(চুয়েটে) ধীরগতি ও নিম্নমানের ওয়াইফাই সংযোগে অতিষ্ঠ সাধারণ শিক্ষার্থী। একাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলগুলোতে পর্যাপ্ত সংযোগ থাকলেও তা ধীরগতি সম্পন্ন হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বহুমুখী সমস্যায় পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরছেন। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘসময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করা লাগলেও এই সময়টিতে ধীর গতির কারণে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারেন না তারা। এছাড়াও বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ দীর্ঘসময় নিয়ে লোডিং হওয়ায় ওয়াইফাই সেবা ব্যবহারে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ওয়াইফাই সমস্যার ব্যাপারে শেখ রাসেল হলের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব নাবিল বলেন, প্রকৌশল শিক্ষায় ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের পড়ালেখার সময় প্রায়ই অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি কিংবা প্রেজেন্টেশনের জন্য গুগল থেকে তথ্য নিতে হয়। ইউটিউবেও কনটেন্ট দেখা লাগে। অথচ, চুয়েটে ইন্টারনেট ব্যবস্থা তেমন একটা ভালো না। মূলত চুয়েট ওয়াইফাই যেটা সবাই ব্যবহার করি সেটা হুটহাট বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরীক্ষার আগের রাতে এ ধরনের পরিস্থিতি বেশ ঝামেলায় ফেলে। অতএব, এখনই সময় এ সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া।
তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী অনুরাশা রাফানা বলেন, সব হলের তুলনায় তাপসী রাবেয়া হলে উচ্চমানের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক এর ব্যবস্থা করা হয়েছে যেটার মাধ্যমে আমরা কয়েক ভাবে (সুইচ, রাউটার) নেটওয়ার্ক সংযোগ দিতে পারি। এই সুবিধা ভোগ করার জন্য আমাদের সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে রাউটার কিনতে হয়েছে। তারপরও প্রায়শই প্রত্যাশিত গতির ওয়াইফাই পেতে অসুবিধা হয়। এছাড়াও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে মোবাইল নেটওয়ার্ক এর অকার্যকারিতার জন্য আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবুও নতুন হল হিসেবে এই সম্পূর্ণ ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়।
পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাফহীম রহমান বলেন, হাতেগোনা কয়েকটা জায়গা ছাড়া কোথাও এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াইফাই এর স্পিড পাওয়াই যায় না। হলেও একই বেহাল অবস্থা। শহীদ তারেক হুদা হলের গণরুমে ৫জি ম্যাশ রাউটার থাকায় ওখানে তাও স্পিড পাওয়া যায়, কিন্তু মেইন হলের ৪ তলায় দিনে ৩/৪ ঘণ্টা কানেক্টই করা যায় না। ডিএল এর সময় একটা পিডিএফ ওপেন হতেও অনেকক্ষণ বসে থাকা লাগে,বাফারিং এর জন্য ইউটিউব ব্যবহারেও অসুবিধা হয়।প্রতিনিয়ত হল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও এর থেকে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা।
হলের ওয়াইফাই সমস্যার ব্যাপারে শামসেন নাহার খান হলের আবাসিক ছাত্রী নিশাত সায়েরা বলেন, চুয়েটে ভর্তির পর থেকেই ওয়াইফাই এর সমস্যা দেখে আসছি। কিন্তু ইদানীং তা সহ্যসীমার বাইরে চলে গিয়েছে। আগে হলে রুমের ভিতর দিকে ওয়াইফাই না পাওয়া গেলেও দরজার পাশে পাওয়া যেত। এখন দরজার পাশে বসেও ওয়াইফাই এর দেখা পাওয়া যায় না। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট কানেকশন যে কতটা জরুরি তা আসলে আমরা সবাই জানি। আশা করি কর্তৃপক্ষ অতি শীঘ্রই ওয়াইফাই সমস্যা নিরসনে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসেন নাহার খান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা বলেন, ওয়াই-ফাই সমস্যা নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন আছি। এটা নিয়ে সেন্ট্রালি ও একটা চিন্তাভাবনা চলছে।
হলের দিক হতে আমরা যতটা সম্ভব রাউটার দিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি তবুও কিছু জায়গায় তা সম্পূর্ণ সমাধান বয়ে নিয়ে আসতে পারছে না। হলে ওয়াইফাই সমস্যা দেখা দিলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক বলেন, গত ১০ বছরে ওয়াইফাই ব্যবস্থাপনা খাতে তেমন কোনো ইনভেস্ট করা হয়নি বা উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই বর্তমান শিক্ষার্থীরা এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
এ সমস্যা সমাধানে আমরা প্রত্যেক হল প্রভোস্টসহ একটা প্রস্তাবনা তৈরী করি, যার মধ্যে প্রত্যেক হলে ও রুমে পর্যাপ্ত ব্রডব্যান্ড কানেকশন দেয়ার একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রস্তাবনা গত ২ মাস আগে আমরা উপাচার্য মহাদয়কে উপস্থাপন করি৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর অনুমোদন ও বাজেট সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নিবো।